সমকালীন প্রতিবেদন : ১৯৭১ সালে যার হাত ধরে তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে হলেন শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে রাজনীতি শুরু করেন।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপরই তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়ান। ১৯৯৬ সালে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, আওয়ামী লীগ সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয় এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন।
তারপর থেকেই বাংলাদেশের ক্ষমতা ছিল মোটামুটি আওয়ামী লীগের হাতেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, শেখ হাসিনাকে কেন 'তানাশাহ' বলে দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে? তার পিছনেও অনেকগুলি স্পষ্ট কারণ রয়েছে। সমালোচকরা অভিযোগ করেন যে, শেখ হাসিনার শাসনকালে স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অনেক সাংবাদিক এবং ব্লগাররা হয়রানির শিকার হয়েছেন বা কারাবন্দী হয়েছেন তাঁদের মতামত প্রকাশের কারণে। এছাড়াও, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে দমন করার অভিযোগ রয়েছে। বিরোধীদলের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁর আমলে, এমনই অভিযোগ সামনে এসেছে বারবার।
এছাড়াও, দেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বারবার বিতর্ক হয়েছে বাংলাদেশে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই অভিযোগ তুলেছে যে, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এবং ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা সরকারবিরোধী মতামত ও সমালোচনাকে দমন করতে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সমালোচকরা মনে করেন, সরকারের সমালোচকদের দমন করতে বিচার ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও শাস্তির হার বেশি দেখা যায়।
এইসব যুক্তি দেখে বোঝা যায়, কেন কিছু লোক শেখ হাসিনার শাসনকালকে তানাশাহীর সাথে তুলনা করে। তবে, এসব অভিযোগের বিপরীতে তাঁর সরকার দাবি করে যে, তাঁরা আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
কিন্তু তার পরিণতি যে এত ভয়াবহ হবে তা কল্পনাও করতে পারেননি শেখ হাসিনা। আর তাই দেশত্যাগের আগে চোখের জল মুছতে মুছতে তাঁর প্রতিক্রিয়া, 'নিজের পরিবারের জন্য নয়, দেশের মানুষের স্বার্থে পদক্ষেপ করেছিলাম।' আপাতত সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোয়, এটাই এখন দেখার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন