সমকালীন প্রতিবেদন : করোনাকালে কাজ হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন রাঁচির যুবক সঞ্জয় কুমার। বছর ৩৪ বয়সের এই যুবক এরপর একসময় আচমকাই বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। ঘটনাচক্রে প্রায় তিন বছর পর কলকাতার হ্যাম রেডিওর মাধ্যমে বনগাঁ থেকে তার সন্ধান পেয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বনগাঁ মহকুমার পেট্রাপোল থানার অন্তর্গত ছয়ঘড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নরহরিপুর গ্রামে একটি মন্দির রয়েছে। দিন দুই আগে স্থানীয় নরহরিপুর হঠাৎ সংঘের সম্পাদক কল্যাণ বিশ্বাস লক্ষ্য করেন যে, ওই মন্দিরে এক ভবঘুরে শুয়ে থাকছে। বিষয়টি তাঁকে নাড়া দেয়।
এর কারণ, সাম্প্রতিককালে ছেলেধরা সন্দেহে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ভবঘুরে গণপিটুনির শিকার হয়েছে। ওই ব্যক্তিকে দেখে হঠাৎ করে কল্যাণ বিশ্বাসের সেই কথা মনে পড়ায় অজানা আশঙ্কা তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই ব্যক্তিকে নিজেদের ক্লাবে আশ্রয় দেন। আর তারপর বিষয়টি পেট্রাপোল থানাকে জানান। পেট্রাপোল থানার মাধ্যমে কল্যাণবাবু কলকাতার হ্যাম রেডিওর সন্ধান পান।
এরপর তিনি হ্যাম রেডিওর এই রাজ্যের সম্পাদক অম্বরিশ নাগবিশ্বাসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে সমস্ত বিষয়টি জানান। আর তারপর কলকাতার হ্যাম রেডিও কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তির সন্ধান চালাতে থাকে। অবশেষে শনিবার সকালে ওই ভবঘুরের আসল পরিচয় এবং তার পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।
জানা গেছে, ওই ব্যক্তির আসল নাম সঞ্জয় কুমার। বয়স ৩৪। বাড়ি ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাঁচি শহরে। সেখানকার নর্থ অফিসপাড়া এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে থাকেন তার পরিবারের সদস্যরা। বাবা রাম সেবক রাম ওই এলাকায় একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ছিলেন।
বেশ কয়েক বছর আগে সঞ্জয় কুমারের বাবা রাম সেবক রাম আচমকাই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর থেকে সঞ্জয় কুমার এবং তার দুই বোনকে বড় করে তোলেন তাদের মা। সাবালক হয়ে সঞ্জয় রাঁচির একটি দোকানে কাজে ঢোকেন। কিন্তু করোনার সময় তার কাজ চলে যায়। আর তারপর থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
এরপর একদিন হঠাৎ করেই রাঁচি স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে বসেন। আর তারপরেই সম্ভবত তিনি এই রাজ্যে এসে পৌঁছান। এরপর বিভিন্ন পথ ঘুড়ে অবশেষে পেট্রাপোলের নরহরিপুর গ্রামের ওই মন্দিরে আশ্রয় পান। আর সেখান থেকেই তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লাব সম্পাদক কল্যাণ বিশ্বাস তাঁদের ক্লাবে ওই ভবঘুরেকে আশ্রয় দেন।
এদিকে, হ্যাম রেডিওর মাধ্যমে পরিবারের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সদস্যের সন্ধান পেয়ে আপ্লুত সঞ্জয়ের পরিবারের সদস্যরা। এদিন খবর পাওয়ার পরেই তারা সঞ্জয়কে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য রাঁচি থেকে পেট্রাপোলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। হ্যাম রেডিওর সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস জানিয়েছেন, উপযুক্ত নথি দেখেই সঞ্জয় কুমারকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন