সমকালীন প্রতিবেদন : জরুরী অবস্থা নয়, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গড়তে চলেছে সেদেশের সেনাবাহিনী। এব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে আজ রাতের মধ্যেই তার প্রক্রিয়া শুরু হবে। সোমবার দুপুরে এমনই ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। এব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান।
ছাত্র বিক্ষোভে এই মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বাংলাদেশের। মৃত্যুর সংখ্যা পর পর বাড়তে থাকে। গণঅভ্যুথানের মতো এমন এক পরিস্থিতিতে সোমবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির কাছে আচমকাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে গোপনে দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে করে প্রথমে তিনি ভারতের আগরতলায় পৌঁছান। সেখান থেকে ফের অন্য গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এদিন শেখ হাসিনা গণভবন ছাড়ার খবর প্রকাশ্যে আসার বেশ কিছুক্ষণ পর ঢাকার গণভবনে আছড়ে পড়ে উদ্বেলিত জনতার ভিড়। গণভবনের গোটাটাই জনতার দখলে চলে যায়। একই সঙ্গে চলে ভাঙচুর। ভেঙে ফেলা হয় বঙ্গবন্ধুর মূর্তিও। দেশজুড়ে হাসিনা ও তার দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ চরমে ওঠে। তাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। গণভবন দখল করার ঘটনার একাধিক ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। গণভবনের ভতরের বিভিন্ন জিনিস লুটপাট শুরু হয়। একেবারেই সাম্প্রতিককালের শ্রীলঙ্কার ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হওয়া আন্দোলন সোমবার সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। নতুন করে সৃষ্ট হওয়া আন্দোলনের ইস্যু ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সেই কারণে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল বাংলাদেশের ছাত্রদের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। সেই আন্দোলন ঘিরেই রবিবার থেকে রক্তের স্রোত বইছিল বাংলাদেশের রাস্তায়। যার মাত্রা এদিন অনেকটাই ছাড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশের ছাত্রদের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ কার্ফু উপেক্ষা করেই এদিন ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক দেয়। সেই কর্মসূচি মতোই রাস্তায় নামে আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন শেখ হাসিনা। আর এরপর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। পাশাপাশি, সর্বদল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আর সেখানেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার কথা ঘোষণা করা হয়।
বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান জানান, ‘আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি সব হত্যা, সব অন্যায়ের বিচার আমরা করব। আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখুন। আমি সব দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব। আমাদেরকে একটু সময় দেন। সহযোগিতা করুন। সেনাবাহিনী, পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনও গোলাগুলি চালানো হবে না। তেমনই নির্দেশ দিয়েছি। ছাত্র সহ আন্দোলনকারীদের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। পরিস্থিতি যদি শান্ত হয়ে যায়, তাহলে জরুরী অবস্থার প্রয়োজন হবে না।’
এদিকে, পরিস্থিতি যে পথে যাচ্ছে তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে নয়াদিল্লি। অনুমান করা হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশের এই অশান্ত পরিস্থিতির পিছনে সরাসরি রয়েছে পাকিস্তানের যোগ। হাসিনার পদত্যাগের পর সরকারের রাশ কার হাতে যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। ইতিমধ্যেই বিএসএফের মহানির্দেশক কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ভারতের সমস্ত সীমান্তে ইতিমধ্যেই হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন