Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪

আদ্যপান্ত বাঙালি ভদ্রলোক চরিত্রের প্রতিভূ ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

 

Buddhadev-a-typical-Bengali-gentleman

সমকালীন প্রতিবেদন : কলেজ জীবন থেকেই রাজনীতিতে হাত পাকিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পাশ করে সরাসরি তিনি জড়িয়ে পড়েন তৎকালীন সিপিআই এর খাদ্য আন্দোলনে। অনেকে বলেন, এই আন্দোলন দিয়েই নাকি সক্রিয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। ১৯৬৬ সালে সিপিএম দলে যোগদান নিঃসন্দেহে তাঁর জীবনে একটি বড় ঘটনা। 

এরপর একে একে ১৯৭১ সালে সিপিএম পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য হওয়া, তারপর ১৯৭৭ সালের বামফ্রন্টের ঐতিহাসিক জয়ের নির্বাচনে উত্তর কলকাতা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া— এভাবেই ঘটে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরণ। ১৯৮২ ও ২০১১ সাল বাদ দিলে, মাঝখানে দীর্ঘ ২৪ বছর যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

বাংলায় বামফ্রন্টের ক্যাবিনেটে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী এবং ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১৯৯৯ সালে উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করা হয়। এরপর ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। 

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্য জুড়ে শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের দিকে নজর দেন তিনি। নতুন আইটি নীতি আনয়নের পাশাপাশি রাজ্যে প্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন ঘটান। ২০০৬ সালে তাঁর জনপ্রিয়তা ও বহুল আলোচিত ব্র্যান্ড বুদ্ধের ভরসায় বামফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়ী হয়। ২০১১ সালের নির্বাচনে দীর্ঘ ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়। 

এই পাঁচ বছরে রাজ্য একাধারে দেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান এবং ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর অভিষেক। তবে রাজনৈতিক জীবনের প্রারম্ভে আদ্যপান্ত বাঙালি ভদ্রলোক চরিত্রের প্রতিভূ ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বামফ্রন্টের জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের ছোঁয়া ছিল না তাঁর মধ্যে। 

জ্যোতি বসুর সার্থক উত্তরসূরি নন বরং তারুণ্যের নতুন হাওয়া এনেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের লাল দুর্গে। সেখানে সহজ বিচরণ ছিল নন্দন, লাইব্রেরির বই, সিনেমা উৎসব, বিদেশি কবিদের কবিতার অনুবাদ, নিখাদ রাজনৈতিক চর্চা। কিন্তু ব্র্যান্ড বুদ্ধ সমস্যা আনল অন্যত্র। যে বামফ্রন্টের আশা ভরসা ছিল কৃষি, গ্রামের মানুষ, বর্গাদার আন্দোলন যেখানে ছিল নির্বাচনী মার্কশিট জুড়ে সবচেয়ে সফল ভাবনা, সেখানে শিল্প গড়ার কারখানায় কোথাও না কোথাও শূন্যতা থেকে গেল। 

বিরোধীরা বলেন যে, ব্র্যান্ড বুদ্ধ নিয়ে যত কথাই হোক, ব্যক্তি বুদ্ধদেব নিজেকে বদলাননি। ফলে সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার জমি অধিগ্রহণ তৈরি করেছিল নতুন পটপরিবর্তন। পার্টির ক্যাডার নিয়ে সমান্তরাল সন্ত্রাসের অভিযোগও উঠেছে ওঁর বিরুদ্ধে! রাজ্যের প্রধান বিরোধী নেত্রীর বিরুদ্ধে যখন তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা কুৎসিত মন্তব্য করেছেন, তখন তাঁর ‘নিস্তব্ধতা’ প্রশ্ন তুলেছিল যে, এই মানুষটির কাকাই তো সেই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য! 

তবে, ২০১১ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিল নির্বাচনের পরাজয়ের ফলে। তবে দোষ যে বেশিরভাগই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছিল, এমনটাই নয়। ৩৪ বছরে যে ঘুণ ধরেছিল, তার বহিঃপ্রকাশ হয়েছিল মাত্র। 

তবে দোষ-গুণ, কৃষি-শিল্প নিয়ে যত তর্ক-বিতর্ক থাক না কেন, বাঙালি একজন ভদ্রলোক মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিল। বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস তাই তার সপ্তম মুখ্যমন্ত্রীকে ব্র্যান্ড বুদ্ধর বাইরে গিয়েই মনে রাখবে। তাই আজ থেকে একশো বছর পরেও বাঙালির মনে থাকবেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন