সমকালীন প্রতিবেদন : পাড়ার ছেলেরা কখনো ভাবেইনি তাদের সকলকে ছেড়ে অঙ্কের স্যার হারিয়ে যাবেন। পরের দিনের অঙ্ক কষে দেখাবেন কাকে? অনেক খোঁজাখুঁজি। না তিন বছর ধরে কোন খবর নেই। গ্রামের খুবই জনপ্রিয় ও মেধাবী ছেলেটি চাকরী না পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পথে!
এদিকে, ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে টানটান উত্তেজনা। শিরীষ গাছের আড়ালে আবডালে ভাঙ্গা গাছের ডাল দিয়ে ভেজা মাটিতে অঙ্ক করে চলেছেন এক অচেনা যুবক। এলাকার মানুষ প্রশ্ন করলে, হিন্দীতে বলেন, 'আপকো কই তকলিফ হ্যায়? মুঝে ছোড় দিজিয়ে, মুঝে ম্যাথ সলভ করনা হ্যায়।'
এদিক ওদিক ঘুরে কিছু খাবার পাওয়া। পাড়ার এক যুবক বিষয়টা পেট্রাপোল থানার আধিকারিক উৎপল সাহাকে জানান। ওসির নির্দেশে হ্যাম রেডিওর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের কাছে খবর আসে পরিমল রায়ের মাধ্যমে। ওই যুবকের সাথে কথা বলতে গেলে তাঁকেও অঙ্কের প্রশ্ন করেন।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীষ নাগ বিশ্বাস জানালেন, 'কথায় কথায় ওই যুবকের মুখ থেকে তাঁর এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান এর নামটা পেয়ে যাই আমরা। যুবক বলেন, গোরক্ষপুরে তার অনেক ছাত্র আছে। এই সূত্র ধরেই আমার ওর এলাকাতে পৌঁছে যাই।'
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, খুবই জনপ্রিয় অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন অমিত কুমার নামের ওই যুবক। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বারগো গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ওই যুবক তাঁর এলাকায় ১৫ টি গ্রামের ৩১২ টি ছাত্রছাত্রীকে বিনা পয়সায় অঙ্ক করাতেন, তাও এক–দুই বছর নয়, ১৪ বছর ধরে। শুধু তাই নয়, যারা পঞ্চায়েতে দিনমজুরি করেন, তাদের সকলকে লেখা শেখানো ও অঙ্ক করা নিয়মিত শেখাতেন এই যুবক।
তিন বছর পরে সুস্থ অবস্থায় তাঁকে পাওয়া গেছে, এই খবর জানাজানি হতেই গ্রামে যেন উৎসব শুরু হয়ে গেছে। রবিবার রাতে পেট্রাপোল থানার ওসি উৎপল সাহার উপস্থিতিতে হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সদস্য রুদ্রপ্রসাদ ঘোষ এবং স্থানীয় যুবক কল্যাণ বিশ্বাস উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা ৭ সদস্যকে মিষ্টিমুখ করিয়ে অংকে পারদর্শী ওই মেধাবী যুবককে পরিবারের হাতে তুলে দিলেন।
যাবার সময় ওই যুবক শুধু বলে গেলেন, 'আপ লোগোকা আগার ম্যাথ মে কই তকলিফ হো তো মেরা পাশ আনা।' ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব আশাবাদী, ওই যুবক দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন, একটা ভালো চাকরি পাবেন, আর রোজ আরও অনেক মানুষকে শিক্ষার আলোতে আলোকিত করবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন