সমকালীন প্রতিবেদন : বাংলাদেশের উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির আঁচ এসে পড়ল পেট্রাপোল সীমান্তেও। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছাড়ার খবর এসে পৌঁছাতেই সীমান্তের চেহারা অতি দ্রুত বদলে যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তে জারি করা হয় হাই অ্যালার্ট। অতিরিক্ত তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের।
গত দুদিন ধরেই নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। নতুন করে ছাত্র আন্দোলনের জেরে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা। একের পর এক হত্যাকাণ্ড হতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই একটু একটু করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। আর এইরকম পরিস্থিতিতে সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দখল নেয় আন্দোলনকারী উন্মত্ত জনতা।
পরিস্থিতি বিপজ্জনক দিকে যাচ্ছে বলে আঁচ করে এদিন দুপুরে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশের নিরাপত্তায় তৎপরতার শুরু হয় বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের সমস্ত সীমান্তবর্তী এলাকায়। দুপুর তিনটে নাগাদ পেট্রাপোল সীমান্তে তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের।
বিশেষ নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন দুপুর তিনটের পর থেকে একদিকে যেমন আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়, তেমনি যাত্রী পরিবহনও একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় সীমান্তে উৎসুক সাধারণ মানুষকেও সরিয়ে দেন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা। ফলে একপ্রকার শুনশান পরিস্থিতি তৈরি হয় পেট্রাপোল সীমান্তে।
এদিন বাংলাদেশের যশোর থেকে পেট্রাপোল সীমান্তে এসে পৌঁছানো বাংলাদেশী নাগরিক হামিদুজ্জামান জানান, 'এদিন দুপুরে বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছানোর পরপরই বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ভাঙচুর, পটকা ফাটানোর আওয়াজ শুনতে পাই।' ফলে তাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। একই অভিজ্ঞতার সাক্ষী ছিলেন বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা কামাল হোসেন।
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা অনি সরকার জানালেন, চিকিৎসার জন্য জরুরি প্রয়োজনে তিনি পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে এসে পৌঁছেছেন। কিন্তু এদিন সকালেও তাঁর এলাকায় যে পরিস্থিতি তিনি দেখে এসেছেন, তাতে তিনি যথেষ্ট আতঙ্কিত। তবে তিনি আশা করেছেন, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হবে।
এদিনের পরিস্থিতি সম্পর্কে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী এদিন বলেন, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভারত থেকে ১৫৬ টি পণ্য বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশের বেনাপোলে পৌঁছেছে।
তিনি আরো জানান, এই মুহূর্তে প্রায় চার শতাধীক পণ্যবোঝাই ভারতীয় ট্রাক বেনাপোল স্থলবন্দরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা যথেষ্ট চিন্তিত ওই ট্রাকগুলিতে থাকা বহু কোটি টাকার পণ্য এবং ট্রাক চালকদের নিরাপত্তা নিয়ে। এব্যাপারে তারা বাংলাদেশ পোর্ট অথরিটির কাছে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন