সমকালীন প্রতিবেদন : রাজ্যের বনদপ্তরের এক মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে অভব্য আচরণের জন্য শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব হারাতে হলো রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরিকে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীদের নির্দেশ তাঁর কাছে পৌঁছে গেছে। তিনি পদত্যাগের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছেন বলে জানা গেছে। রাজ্যে তৃণমূলের ১৩ বছরের রাজত্বকালে একজন মন্ত্রীকে এইভাবে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন।
পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর সমুদ্র সৈকতে জবরদখল হাটানো নিয়ে বনদপ্তরের এক মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি। আর সেই সময় তিনি ওই মহিলা আধিকারিককে উদ্দেশ্য করে হুমকি এবং অভব্য আচরণ করেন বলে অভিযোগ। কারামন্ত্রীর সেই আচরণের ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়।
একজন সরকারি মহিলা আধিকারিকের প্রতি রাজ্যের একজন দায়িত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এহেন আচরণের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠে যায় রাজ্যজুড়ে। বিরোধীপক্ষ এব্যাপারে তৃণমূল দল এবং রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলে। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই চরম অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয় তৃণমূল দল এবং রাজ্য সরকারকে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে অবশেষে কারামন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করল তৃণমূল নেতৃত্ব এবং রাজ্য সরকার। দলের পক্ষ থেকে গতকালই অখিল গিরির ওই ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা করা হয়। পাশাপাশি আজ তাঁর আচরণের জন্য প্রকাশ্য এবং ওই মহিলা আধিকারিকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই নির্দেশের পর আখিল গিরি নিজের কৃতকর্মের জন্য ভুল স্বীকার করলেও মহিলা আধিকারিকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে রাজি নন। তিনি জানিয়েছেন, আজ রাতেই তিনি ইমেইল মারফত পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন। পাশাপাশি, সোমবার বিধানসভায় নিজে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। তবে তিনি ক্ষমা চাইবেন না। লড়াই জারি থাকবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি।
উল্লেখ্য, পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর সমুদ্র সৈকতে বেআইনিভাবে গজিয়ে ওঠা দোকানপাট ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নেন স্থানীয় বনদপ্তরের রেঞ্জ অফিসার মনীষা সাউ। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শনিবার ওই মহিলা আধিকারিককে প্রকাশ্যে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন রাজ্যের কারামন্ত্রী তথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি।
এই ঘটনার ছবি প্রকাশ্যে আসতেই অভিষেক ব্যানার্জির অফিস থেকে তৃণমূল মুখপাত্রদের মোবাইলে মেসেজ করে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁরা যেন কেউ অখিল গিরির পক্ষে কথা না বলেন। কারণ, অখিল গিরির এই আচরণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলে তাঁকে যেন কোন নেতা প্রশ্রয় না দেন। অখিল গিরির এহেন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাও। তিনি নিজে অসম্মানিত রেঞ্জ অফিসারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগে ভারতের মহিলা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন আখিল গিরি। সেই সময় দলের পক্ষ থেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়। পাশাপাশি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অখিল গিরিকে এব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও যে অখিল গিরির বোধদয় হয়নি শনিবারে ঘটনা তারই প্রমাণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন