সমকালীন প্রতিবেদন : রাজ্যের দুর্গাপুজো আয়োজক কমিটিগুলির জন্য সুখবর। রাজ্য সরকার এবারে দুর্গাপুজো কমিটিগুলির জন্য সরকারি অনুদান আরও বাড়িয়ে দিল। গত বছর ক্লাব প্রতি অনুদানের পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার টাকা। আর এবারে সেই পরিমাণ বাড়িয়ে করা হল ৮৫ হাজার টাকা। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যের ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে এই অনুদান দেওয়া হবে।
রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি প্রাকপুজো প্রস্তুতি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ছাড়াও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা, কলকাতা পুলিশের আধিকারিকগণ ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি জেলায় জেলায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বৈঠকে অংশ নেন জেলার পুজো কমিটিগুলির প্রতিনিধিরা।
এই বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, এবছর পুজোর সরকারি অনুদান ১৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৮৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আর এই অনুদান পাবে রাজ্যের ৪৩ হাজার পুজো কমিটি। ২০২৫ সাল থেকে এই অনুদান বৃদ্ধি পেয়ে হবে এক লক্ষ টাকা। ২০২২ সালে প্রতিটি ক্লাব পেয়েছিল ৬০ হাজার টাকা করে। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে সেই অনুদান বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৭০ হাজার। অর্থাৎ প্রতি বছরই অনুদানের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।
শুধু আর্থিক অনুদান বৃদ্ধিই নয়, বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রেও ছাড়ের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুতের মাসুলেও ৭৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার জন্য সিইএসই এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বছর এই বিদ্যুত মাসুলের ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৬৬ শতাংশ। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৬০ শতাংশ
আর্থিক অনুদান, বিদ্যুৎ বিলে ছাড়ের পাশাপাশি ফায়ার লাইসেন্স-সহ অন্যান্য সরকারি অনুমতিও বিনামূল্যে মিলবে বলে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি এদিন বলেন, 'এবার পুজোর কার্নিভাল হবে ১৫ অক্টোবর। বিসর্জন শুরু হবে দশমী থেকেই। ১৩ ও ১৪ তারিখ বিসর্জন চলবে।' পুজোর দিনগুলিতে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য পুজোকর্তাদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
চলতি বছর ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী। ১৫ অক্টোবর কলকাতায় হবে প্রতিমা নিরঞ্জনের কার্নিভাল। জেলায় কবে কার্নিভাল হবে, তা জেলাপ্রশাসনকে স্থির করার জন্য এদিন বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুজোয় পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা যাতে কোনওভাবেই না ঘটে, তার দিকে সতর্ক থাকার জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ এই বিষয়ে সতর্ক থাকে। সেই সঙ্গে ক্লাবগুলিকেও সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় অনুদান ঘোষণা করে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে শুরু করে রাজ্য সরকার। করোনার সময় থেকে অনুদান বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে আরও ১০ হাজার টাকা বাড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
যদিও বিরোধী তথা রাজ্যের একাংশের মানুষের প্রশ্ন, চাকরি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে এইভাবে সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করার যুক্তি কতটা? আর এই যৌক্তিকতা নিয়ে এর আগে আদালতে মামলাও হয়েছিল। যদিও সেই মামলা টেকেনি। সেইসময় রাজ্য সরকার আদালতকে জানিয়েছিল, দুর্গাপুজোর সঙ্গে বাংলার মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে। অনুদান বন্ধ করে দিলে অনেক পুজো কমিটির পক্ষেই বাংলার এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
এবছর ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী। অর্থাৎ হাতে মাত্র আর ৭৮ দিন। ইতিমধ্যেই কলকাতা সহ জেলায় জেলায় পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির জেরে সবকিছুরই দাম বেড়েছে। সেক্ষেত্রে এবারের বৈঠকে ক্লাবগুলির বিশেষ কৌতূহল ছিল পুজো অনুদান নিয়ে। আর সেই পরিস্থিতিতে এদিন অনুদান বৃদ্ধির ঘোষণায় পুজো কমিটিগুলিতে খুশির হাওয়া। পাশাপাশি, রাজ্যের লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন, পুজোর অনুদান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যতটা উৎসাহী, সরকারি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যদি সরকার ততটা উৎসাহী হতো, তাহলে রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবক–যুবতীরাও বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসবে প্রাণ ঢেলে নিজেদেরকে সামীল করতে পারতেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন