সমকালীন প্রতিবেদন : অচেনা নম্বর থেকে ভিডিও কল আসছে আপনার ফোনে? তাহলে কিন্তু এখনই সাবধান হোন। ভুল করেও সেই কল রিসিভ করবেন না। আর কোনওভাবে রিসিভ করে ফেললে বড়সড় প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন আপনি। এই ভুল থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায়ও আছে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহার করে প্রতিমুহূর্তেই প্রতারণাচক্র নানা কৌশলে ফাঁদ পাতছে। আর এই ফাঁদে পা দিলেই মহাবিপদ। অনেকেই কিছু না বুঝে আতঙ্কিত হয়ে এই প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন। আর সমস্যাটা তৈরি হচ্ছে সেখান থেকে।
অনেকক্ষেত্রেই অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে কেওয়াইসি জমা দেওয়ার নাম করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, এটিএম কার্ড ইত্যাদি অচল হয়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে ওটিপি পাঠানো হয়। আর কোনওভাবে যদি ওই ওটিপি আপনি ফোনের অপর প্রান্তে থাকা অচেনা ব্যক্তিকে জানিয়ে দেন, তাহলে মুহূর্তের মধ্যেই খালি হয়ে যাবে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
ফোন করে এইভাবে ওটিপি চেয়ে প্রতারণার ঘটনা অনেকদিন ধরেই ঘটছে। বিভিন্নভাবে মানুষকে এব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতারণার অন্য আর এক কৌশলের নাম 'সেক্স এক্সটরশান'। বর্তমানে নতুন এই কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পাচ্ছে প্রতারকদের একটি অংশ।
'সেক্স এক্সটরশান' শব্দটি বা এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও ততটা প্রচলিত হয়নি। অর্থাৎ সাধারণভাবে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সকলে এই বিষয়টি নিয়ে জেনে উঠতে পারেননি। আর তাই এই পদ্ধতিতে নিজেদের অজান্তেই প্রতারণার শিকার হয়ে যাচ্ছেন অনেক মোবাইল ব্যবহারকারী।
'সেক্স এক্সটরশান' পদ্ধতির মাধ্যমে কিভাবে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে, এবার জেনে নিন সেই বিষয়টি। যদি মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে ভিডিও কল করা হয়, তাহলে অনেকেই সেই ভিডিও কল রিসিভ করেন। আর তখনই ঘটে বিপদটি। ওই কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গেই ফোনের অপর প্রান্তে থাকা কোনও সুন্দরী যুবতী চোখের নিমেষে বিবস্ত্র হয়ে আপনার মোবাইলের সামনে উপস্থিত হয়ে যায়।
বিষয়টি যদি তৎক্ষণাৎ বুঝে গিয়ে আপনি সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেন, তাহলে অনেকটাই বাঁচোয়া। আর যদি আগ্রহী হয়ে ওই অবস্থায় ওই যুবতীর সঙ্গে কথোপকথন অথবা তার নগ্ন শরীর দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তাহলেই মহাবিপদ। কারণ, এই ধরনের কথোপকথন বা নগ্ন অবস্থায় ভিডিও বার্তালাপ কিন্তু রেকর্ডিং করে রাখছে প্রতারক চক্র।
ফোনের লাইন কাটার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার মোবাইলে সেই ছবি পাঠিয়ে দিয়ে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করা হবে। বলা হবে, এখনই যদি আপনি তাদের অ্যাকাউন্টে মোটা টাকা জমা না করেন, তাহলে তারা আপনার পরিচিত মহল অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি ভাইরাল করে দেবে। আর সেসব ক্ষেত্রে অনেকেই নিজের সম্মান বাঁচাতে তাদের কথা মতো লক্ষ লক্ষ টাকা জমা করে সর্বশান্ত হচ্ছেন।
এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা বর্তমানে খুবই হচ্ছে। আর তাই এব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা যদি আপনার সঙ্গে হয়ে থাকে, তাহলে কোনভাবেই প্রতারকদের কথায় কান না দিয়ে সরাসরি আপনার স্থানীয় সাইবার ক্রাইম থানায় অতি দ্রুত অভিযোগ দায়ের করুন। আর তাহলেই আপনি প্রতারকদের হাত থেকে মুক্তি পাবেন।
সোমবার বনগাঁ পুলিশ জেলার সুপার দীনেশ কুমার সাংবাদিক বৈঠক করে ফের একবার সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে এই সচেতনতার বার্তা দিলেন। তিনি বলেন, কোনও অচেনা নম্বর থেকে ফোনে ব্যাংক বা অন্যান্য সংক্রান্ত বিষয়ে ভয় দেখিয়ে ওটিপি শেয়ার করতে বললে কোনভাবেই করবেন না। এমনকি অচেনা নম্বর থেকে ভিডিও কল করলে তা রিসিভ করবেন না। ভুলক্রমে যদি সেই কল রিসিভ করা হয়ে যায়, তাহলে লাইন কেটে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করুন।
সাম্প্রতিককালে বনগাঁ পুলিশ জেলার অন্তর্গত এলাকা থেকে বেশ কিছু মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে জেলা পুলিশের তাৎপরতায় ৬০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। 'প্রাপ্তি' নামের পুলিশের বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে সোমবার সেই মোবাইল ফোনগুলি তাঁদের মালিকদের হাতে তুলে দেন জেলা পুলিশের কর্তারা। নিজেদের হারানো ফোন ফিরে পেয়ে পুলিশের উপর খুশি তাঁরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন