সমকালীন প্রতিবেদন : কথায় বলে না, ‘উপরওয়ালা যব দেতা হ্যায় তো, ছপ্পড় ফাঁড়কে দেতা হ্যায়’। এবার সেরকমই একটা ঘটনা ঘটল দিনমজুর আনন্দ সরকারের সঙ্গে। মাত্র ৬০ টাকাতেই কোটিপতি হলেন এই দরিদ্র মানুষটি। এক লহমায় বদলে গেল দিনমজুরের ভাগ্যের চাকা। সুখ এল সামনের দরজা দিয়েই।
বাঁকুড়ার খাতড়ার বৈদ্যনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাদড়ার বাসিন্দা আনন্দ সরকার পেশায় একজন দিনমজুর। বউ, ছেলে, মেয়ে নিয়ে চারজনের অভাবের সংসারে তিনি একাই উপার্জনশীল ব্যক্তি। যার ফলে, আনন্দবাবুর টাকা দিয়েই কোনরকমে তাঁদের সংসার চলার পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনাও চলে।
সংসার সামলাতে গিয়ে রীতিমতো নাজেহাল হয়ে পড়তে হয় আনন্দবাবুকে। তবে স্বপ্ন ছিল একদিন কোটিপতি হবেন। আর সেই নেশায় মাঝেমধ্যেই লটারির টিকিট কাটতেন এই মানুষটা। এইভাবে সোমবারও কাজের জন্য স্থানীয় আড়কামা মোড়ে গিয়ে, সেখান থেকেই মাত্র ৬০ টাকা দিয়ে অন্যান্য দিনের মত একটা লটারির টিকিট কাটেন আনন্দ সরকার।
টিকিট নিয়ে কাজ শেষে বাড়িও ফিরে আসেন তিনি। বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জানতে পারেন, এবারের খেলায় তাঁর কাছে থাকা লটারির টিকিটে ১ কোটি টাকা বেঁধেছে। শুনেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন আনন্দবাবু। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশী কয়েকজনকে বিষয়টি জানান।
একটা সময় ছেঁড়া কাথায় শুয়ে কোটি না থুড়ি, লাখ টাকার যে স্বপ্নটা দেখতেন তিনি, আজ সেটা পূরণ হওয়ায় খুশির জোয়ার বইছে তাঁর গোটা পরিবারে। নিজের আনন্দটা আশেপাশের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর মাথায় অন্য চিন্তা চলে আসে।
এত টাকা পুরস্কার হিসেবে জেতার পর কিছুটা সুরক্ষার অভাব বোধ করতেই সোজা খাতড়া থানায় পৌঁছে যান আনন্দবাবু। পুলিশের সহায়তায় পুরস্কারের অর্থ সংগ্রহের জন্য আর্জি জানান তিনি। আনন্দবাবুর এই আনন্দের দিনে খুশি তাঁর প্রতিবেশীরাও।
তাঁরা জানান, 'অভাবের সংসারে দিন রাত এক করে খাটাখাটনি করতে হয় আনন্দ সরকারকে। লটারিতে কোটি টাকা জেতার পরে ওঁদের সংসারের অবস্থাও ভালো হবে এবং সেইসঙ্গে ছেলে মেয়ে দুটোর পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে সমস্যা হবে না।'
সাধারণত দেখা যায়, যারা লটারির টিকিট কেটে থাকেন, তাঁরা মোটা টাকা পুরস্কার পাওয়ার পরেও টাকার লোভ ছাড়তে পারেন না। আর তাতে করে তাঁর পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সেই অর্থও চলে যায়। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা উল্টো সুরেই হাঁটতে চান আনন্দবাবু।
তিনি জানান, ‘আর লটারির টিকিট কাটব না আমি। ছেলে মেয়ে দুটোর পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছিল। তাই এই টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েকে ভালো করে পড়াশোনা করাবো। আবার নতুন করে জীবন শুরু করব।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন