সমকালীন প্রতিবেদন : ভূগোলে স্নাতকোত্তর সঙ্গে বিএড ডিগ্রি। সুযোগ পেলে অনায়াসেই কোনো স্কুলে আজ শিক্ষিকা হতে পারতেন। অন্য কোনো চাকরি পাওয়াটাও হয়তো খুব একটা কঠিন ছিল না। কিন্তু চাকরির এই বাজারে সুযোগ আর জুটল কই!
অগত্যা সংসারের হাল ধরতে এখন লোকাল ট্রেনের পরিচিত এক হকার হয়ে উঠেছেন বৃষ্টি পাল। বাঁকুড়ার ছোট্ট রেল স্টেশন পিয়ারডোবা। এই স্টেশনেই শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা– প্রতিদিন সাত সকালেই দু'কাঁধে ভারী দু'খানা ব্যাগ নিয়েই আসেন বৃষ্টি।
তারপর দিনভর এ ট্রেন, সে ট্রেন করে চলে দৌড়ঝাঁপ। লোকাল ট্রেনের মূলত মহিলা কামরায় ওঠানামা করে চলে ব্যবসা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলে ফের স্টেশন ছেড়ে ব্যাগ দু'খানা কাঁধে ঝুলিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেওয়া। বাঁকুড়ার সাবড়াকোন গ্রামের গৃহবধূ বৃষ্টি পালের এটাই এখন রোজনামচা।
জীবনের ভূগোলে এমন পরিণতি হওয়ার কথা ছিল না বৃষ্টি পালের। অভাবের সংসারে ছোট থেকেই মেধাবী বৃষ্টির লক্ষ্য ছিল শিক্ষিকা হওয়ার। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকেই ভূগোলে স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি। সেরে ফেলেন বিএড প্রশিক্ষণও।
কিন্তু শিক্ষিকা হওয়ার প্রবেশপথেই থামতে হয়। এদিকে, তাঁর স্বামীও কর্মহীন হয়ে পড়েন মাঝে। সেদিনই চাকরির আশা ত্যাগ করে হকারির পথে নামেন বৃষ্টি। নিজের জেদ আর সাহসকে সম্বল করেই নামেন এই পেশায়।
একসময়ের শিক্ষিকা হয়ে ওঠার স্বপ্ন আজ ভেঙে চুরমার হলেও জীবন যুদ্ধে হার না মানা বৃষ্টি অবশ্য গর্ব করে বলতে পারেন, কোনো কাজই ছোট নয়। বৃষ্টির এই লড়াইকে কুর্নিশ আমাদের সকলের পক্ষ থেকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন