সমকালীন প্রতিবেদন : আন্টার্কটিকা হল পৃথিবীর দক্ষিণতম মহাদেশ, তাই একে কুমেরু বলা হয়ে থাকে। আন্টার্কটিকা সার্কেল প্রায় সম্পূর্ণ দক্ষিণে অবস্থিত এবং দক্ষিণ মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। এটি হল পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ, যা আয়তনে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় দ্বিগুণ। আন্টার্কটিকার বেশিরভাগ অংশই বরফ দ্বারা আবৃত, যার গড় পুরুত্ব ১.৯ কিমি।
আন্টার্কটিকা মহাদেশ হল বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ঠাণ্ডা, শুষ্কতম এবং বায়ুপ্রবাহপূর্ণ একটি মেরুদেশ। এটি প্রধানত একটি মেরু মরুভূমি, যেখানে বার্ষিক ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় উপকূল বরাবর। তবে অনেক কম বৃষ্টি হয় অভ্যন্তরীণ এলাকায়।
বিজ্ঞানীদের অভিমত, বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ স্বাদু জলের ভান্ডার সেখানে বরফ হয়ে জমে রয়েছে, যা গলে গেলে পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬০ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও, আন্টার্কটিকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড হল মাইনাস ৮৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর এখানে গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই মহাদেশে প্রাণীদের বৈচিত্র্য নেই বললেই চলে। এখানে রয়েছে মাইট, নেমাটোড, পেঙ্গুইন, সীল এবং টার্ডিগ্রেড। গাছপালা বলতে শুধুমাত্র কিছু টুন্দ্রা গাছ নিয়েই গঠিত এই মহাদেশ।
আর এই বরফের দেশেই এবার এল বসন্ত। বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট বলছে, এই মহাদেশের সিগনি দ্বীপে মূলত দু’ধরনের উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা গিয়েছে। আর তাতে নাকি এখন ফুলও ফুটেছে। তথ্য দেখলে, ১৯৬০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে যে হারে এই উদ্ভিদের জন্ম হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তার ১০ গুণ উদ্ভিদ জন্মেছে এখানে।
এছাড়াও, আন্টার্কটিকায় অন্য ধরনের উদ্ভিদের জন্মের হারও বৃদ্ধি হয়েছে। রিপোর্ট বলছে, আগের তুলনায় এখন ওই অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্ভিদের বৃদ্ধি বেড়েছে পাঁচ গুণ। আর এই ঘটনা দেখেই আশঙ্কার মেঘ জমেছে বিজ্ঞানীদের মনে। কারণ, এর আগে এই তীব্র শীতল অঞ্চলে এত দ্রুত কখনও কোনো উদ্ভিদের বৃদ্ধি হয়নি।
শুধু বৃদ্ধি নয়, ওই চরম শীতল আবহাওয়ায় ফুলও ফুটতে শুরু করেছে। তাতেই বুক কাঁপছে পরিবেশবিদ থেকে আবহাওয়াবিদদের। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে সেখানে নতুন ধরনের উদ্ভিদের জন্ম হচ্ছে।
এর ফলে কোপ পড়তে পারে সেখানকার আদি বাসিন্দা মস, লিচেনের বৃদ্ধিতে। এমনকি মাটির চরিত্রও বদলে যেতে পারে বলে মত গবেষকদের। এই ধরনের উদ্ভিদ পচে মাটির সঙ্গে মিশলে মাটির অম্লত্বের পরিমাণ বদলে যেতে পারে।
তাতে নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। তার প্রভাব পড়তে পারে পরিবেশে, বাস্তুতন্ত্রে। তাই আপাতত এই ঘটনা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন