সমকালীন প্রতিবেদন : এক ব্যবসায়ীকে খুনের অভিযোগে তাঁরই ভাইকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। অভিযুক্ত ব্যক্তি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার জামদানি এলাকা থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া থানার দক্ষিন চাতরা এলাকার বাসিন্দা মফিজুর রহমান (৪৬) এলাকার পুরনো বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তাঁর স্ত্রী সহেলি আহমেদ পুলিশকে জানিয়েছেন, এক ব্যক্তির কাছে মোটা টাকা পাওনা ছিল তাঁর স্বামীর।
বুধবার রাতে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। পাওনা টাকা উদ্ধার করতে ভাই মসিউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধে ৬টা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হন মফিজুর। এরপর রাত বাড়লেও তাদের আর কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
রাত ১১টা নাগাদ পুলিশের মাধ্যমে মফিজুরের পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন যে, গাইঘাটা থানার জামদানি এলাকায় জামদানি-মধুসূদনকাটি রোডের ধার থেকে মফিজুরের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এই খবরে স্বাভাবিকভাবে চমকে যান পরিবারের লোকেরা।
এদিকে, এদিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ নির্জন ওই এলাকায় এক পরিচিত ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মৃতদেহের মুখ, হাত, গলা সহ একাধিক জায়গায় গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। তারাই পুলিশকে খবর দেন।
খবর পেয়ে ওই এলাকায় হাজির হয় গাইঘাটা এবং গোবরডাঙা থানার পুলিশ। তারা মৃতদেহ উদ্ধার করে বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যান। অন্যদিকে, রাতেই এলাকায় টহল দেওয়ার সময় নম্বরপ্লেট ঢাকা সন্দেহজনক একটি মোটরবাইককে আটক করে পুলিশ।
ওই বাইকে যে ছিল, তার নাম মসিউর রহমান। সম্পর্কে সে মফিজুরের ভাই। তার গায়ে এবং জামায় রক্তের দাগ ছিল। আর তা দেখে সন্দেহ হওয়ায় তাকে প্রথমে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তার কথায় অসঙ্গতি মেলায় পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের সন্দেহ, বিশেষ কোনও কারনে দাদাকে খুন করে প্রমান লোপাটের উদ্দেশ্যে দেহ গাইঘাটার একটি নির্জন এলাকায় ফেলে পালাচ্ছিল মসিউর। কিন্তু প্রাথমিক কিছু প্রমানে সন্দেহ হওয়ায় এই খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
যদিও এব্যাপারে অভিযুক্ত মসিউরের বক্তব্য, পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে দাদার উপর হামলা চালায় অন্যরা। দাদাকে রক্ষা করতে গিয়ে তার দেহে রক্তের দাগ লেগেছে। সে নিজেও আহত হয়েছে। কিন্তু দাদাকে রক্ষা করতে পারে নি। ভয় পেয়ে সে পালানোর চেষ্টা করছিল।
এদিকে, ধৃত মসিউরকে বৃহস্পতিবার বনগাঁ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ৭ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই খুনের ঘটনার আসল রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ।
আরও জানা গেছে, খুনের অভিযোগে ধৃত মসিউর রহমান বনগাঁর রাখালদাস হাইস্কুলের ইংরাজির শিক্ষক। দাদাকে খুনের ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে, তা কিছুতেই মানতে পারছেন না তার সহকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত পুলিশি তদন্তে কি সত্য বেরিয়ে আসে, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন সবাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন