সমকালীন প্রতিবেদন : পুরুষ ও মহিলা সাম্যের কথা প্রায়ই শোনা যায়। কেউ কেউ আবার ফেমিনিজম নিয়েও আজকাল আলোচনা করেন। আর সেটাই তো স্বাভাবিক। আজকাল ঘরে বাইরে সমানভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে চলেছে মেয়েরা।
নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিয়ে সভা-আলোচনাও নেহাত কম হয় না। কিন্তু সবক্ষেত্রেই কি সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে? তা নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ নেই। এমনই এক সময়ে দাঁড়িয়ে সাম্যবাদের এক অভিনব বার্তা দিল সিউড়ির বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার।
পুত্র সন্তানের পৈতে হলে কন্যা সন্তানের কেন হবে না? এই প্রশ্ন তুলে বৈদিক যুগের রীতি মেনে পৈতে দেওয়া হল কন্যা সন্তানের। ব্রাহ্মণ সমাজে এ এক বিরল ঘটনা। জানা যায়, বৈদিক যুগে নাকি মহিলাদের পৈতে দেওয়ার রীতির প্রচলন ছিল।
বৈদিক যুগে হয়তো মেয়েদের ‘দ্বিজা’ হওয়ার রেওয়াজ ছিল। সেই রীতি সম্পর্কে খোঁজ নিতে রীতিমতো গবেষণা চালিয়েছে বীরভূমের এই পরিবার। আর সবটা জেনে সেই বৈদিক ‘রীতি’ ফেরাতে কন্যাসন্তানের পৈতের আয়োজন করলেন বীরভূমের সিউড়ির চিকিৎসক দম্পতি।
বসন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কৌশানী বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের দশ বছরের মেয়ে কৈরভীর উপনয়নের আয়োজন করলেন। এই চিকিৎসক বাবা, মা একপ্রকার প্রচলিত রীতির পরিপন্থী হয়ে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন ওই দম্পতি। সিউড়ির রামকৃষ্ণপল্লীর বাসভবনে মেয়ের উপনয়নের আয়োজন করেছেন তাঁরা। কার্ড ছাপিয়ে সবাইকে নেমন্তন্ন করা হয়। বুধবারের দুপুরে ওই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে চারদিকে সাজসাজ রব।
বাড়ি ভর্তি আত্মীয়-স্বজন। হলুদ শাড়ি, ফুলের মালায় সেজেছিল কৈরভী। তাঁকে ঘিরেই এদিন সব আয়োজন করা হয়। তারও এমন অনুষ্ঠানকে ঘিরে উত্তেজনা ছিল প্রবল। তাই হয়তো যত্ন ও ভক্তির সঙ্গে প্রত্যেকটি নিয়মও পালন করে সে।
দম্পতি অবশ্য জানিয়েছেন, হঠাৎ ইচ্ছে থেকে নয়, গবেষণা করতে হয়েছে পুরোটা। তার উপর ভিত্তি করেই তাঁদের কন্যার 'প্রাপ্তির’ অনুষ্ঠান করেন। মেয়ের হৃত অধিকার ফিরে পাওয়া উচিত এই ধারণাকে সামনে রেখেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত।
দম্পতির কথায়, সন্তান পুত্র হোক অথবা কন্যা– তাদের সমান অধিকার পাওয়া উচিত। তাই সাম্যবাদের বার্তা দিতেই এই উদ্যোগ বলে জানাচ্ছে সিউড়ির এই পরিবার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন