সমকালীন প্রতিবেদন : দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা আটকে থাকার পর অবশেষে পুলিশ আটক করল সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আপাতত তাকে মিনাখাঁ থানার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এদিন সন্ধ্যে ৭টা নাগাদ চারিদিকে যখন অন্ধকার নেমে আসে, তখন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা অজিত মাইতিকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। এই সময় উল্টো দিক থেকে 'চোর চোর' বলে স্লোগান তুলে চিৎকার করেন প্রতিবাদী গ্রামবাসীরা।
গত বেশ কিছুদিন ধরেই জমি সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি এলাকা। সন্দেশখালি এলাকার অন্যান্য তৃণমূল নেতাদের মতো অজিত মাইতিও শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
গত দুদিন আগেই অজিত মাইতির বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে জুতোপেটা করেন গ্রামের মহিলারা। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তার বাড়িতে ভাঙচুরও চালান। রবিবার ফের অজিত মাইতির বিরুদ্ধে এলাকায় গণরোষের সৃষ্টি হয়।
রবিবার পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে দেখা করে দলের একটি বৈঠক সেরে বাড়ি ফেরার পথে তাকে দেখতে পান গ্রামবাসীরা। আর তখনই গ্রামের মহিলারা তাকে তাড়া করেন। প্রাণভয়ে তখন পালাতে শুরু করেন অজিত মাইতি।
গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে এলাকার একাধিক বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করলেও সেইসব বাড়ির দরজা বন্ধ থাকায় সেসব বাড়িগুলিতে ঢুকতে পারেননি অজিত মাইতি। অবশেষে একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সেখানেই আশ্রয় নেন।
সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার সময় সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা প্রার্থনা করেন অজিত মাইতি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবী করে সমস্ত দায় চাপান শেখ শাহজাহানের উপর।
এদিন পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে, অজিত মাইতি সংবাদ মাধ্যমের কাছে জানান, তিনি দল থেকে পদত্যাগ করতে চান। শেখ শাহজাহানের মতো একজন দুর্নীতিগ্রস্ত নেতার সঙ্গে থেকে তারও পচা আলুর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, সন্দেশখালির বেড়মজুর এলাকায় অজিত মাইতি কিছুদিন আগেও তৃণমূলের অঞ্চল সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে জমি দখলের একাধিক অভিযোগ তুলেছেন এলাকার মানুষ। আর তাকে কেন্দ্র করেই ক্ষোভ ছিল অজিত মাইতির বিরুদ্ধে।
একুশের নির্বাচনের পর থেকেই গত তিন বছর ধরে বিভিন্ন জমি, মাছের ভেড়ি বেনামে দখল করার অভিযোগ তুলেছেন গ্রামের বাসিন্দারা। আর এভাবেই জমি দখল, অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষের চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে অবশ্য ইতিমধ্যেই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ঘোষণা করেছেন যে, অজিত মাইতিকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে যদি অন্যায় করে থাকে, তাহলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আর তারপরই এদিন সন্ধেয় তাকে আটক করা হলো।
সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা লুকিয়ে থাকার পর অবশেষে এদিন সন্ধে সাতটা নাগাদ সন্দেশখালি থানার পুলিশ অজিত মাইতিকে সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে মিনাখাঁ থানায় নিয়ে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন