সমকালীন প্রতিবেদন : যে কোনও অসুখ মানেই তা যন্ত্রণাদায়ক! তবে আতঙ্কের অপর নাম ক্যান্সার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, ক্যান্সারের মতো মারন রোগ থেকে এখনও সম্পূর্ণভাবে মুক্তির উপায় মেলেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হল ক্যান্সার। যা ক্রমশ ভয়ানক আকার ধারণ করছে। ভারতেও ক্রমে ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে। ২০২০ সালে কর্কট রোগে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
২০২২-এর ডিসেম্বরে সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য জানিয়েছিলেন, ২০২২-এ ভারতে ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই রোগের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু কীভাবে এই মারণ রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এখনও এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থেকেই যায়। অবশ্য আক্রান্তের শুরুতে রোগটি নির্ণয় করা সম্ভব হলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এরই মধ্যে মিলল স্বস্তির খবর। এবার ক্যান্সারের চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণায় ঘটল বড় অগ্রগতি।
ক্যান্সার কোষকে হত্যা করতে পারে, এমন ‘কিল সুইচ’ আবিষ্কারের দাবি করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া প্রদেশের স্যাক্রামেন্টোয় অবস্থিত ‘ইউসি ডেভিস কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টারের বিজ্ঞানীরা।
ক্যালিফোর্নিয়ার বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে, তাঁরা একটি রিসেপ্টরে এক প্রকার প্রোটিন শনাক্ত করেছেন, যা ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য ডিজাইন করা যেতে পারে। CD95 রিসেপ্টর ফাস নামেও পরিচিত যাকে, ডেথ রিসেপ্টর বলা হয়।
এই প্রোটিন রিসেপ্টরগুলি কোষের ঝিল্লি বা মেমব্রেনে থাকে। এই প্রোটিনগুলি রিসেপ্টরের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তাদের একবার জাগিয়ে দিলে অর্থাৎ সক্রিয় করা হলে, তারা একটি বিশেষ সংকেত প্রকাশ করে। সেই সঙ্কেত ক্যান্সার কোষগুলিকে নিজে থেকেই ধ্বংস করে দেয়।
গবেষকরা এই চিকিৎসা পদ্ধতির নাম দিয়েছেন সিএআর টি-সেল থেরাপি। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রথমে কোনও ক্যান্সার রোগীর রক্ত থেকে টি-কোষ সংগ্রহ করা হয়। এরপর গবেষণাগারে ওই টি-কোষগুলির জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে কাইমেরিক অ্যান্টিজেন রিসেপ্টর বা সিএআর নামে একটি রিসেপ্টর তৈরি করা হয়।
ওই রিসেপ্টরগুলিকে ফের রোগীর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই সক্রিয় কিল সুইচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে শুরু করে, অর্থাৎ ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলিতে নিষ্ক্রিয় করতে শুরু করে। এখনও পর্যন্ত এই থেরাপি তরল ক্যান্সার, লিউকেমিয়া এবং অন্যান্য রক্তের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ভালো কার্যকারিতা দেখিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এটি স্তন, ফুসফুস এবং অন্ত্রের ক্যান্সারের মতো কঠিন টিউমারের বিরুদ্ধে সামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে যে, থেরাপিটি অদূর ভবিষ্যতে কঠিন ক্যান্সারকে ধ্বংস করার জন্য কাজে আসতে পারে, এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন