সমকালীন প্রতিবেদন : চোর-ডাকাতের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে বেশির ভাগ মানুষই নিজের পছন্দের ব্যাঙ্কের লকারে গিয়ে সোনার গয়না, দামি সম্পদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা রেখে আসেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও আপনার মূল্যবান জিনিসগুলি কি সুরক্ষিত?
জানেন কি, আপনার অজান্তেই ভাঙা হতে পারে আপনার ব্যাঙ্কের লকার। অনেকেই জানেন না যে, আপনার ব্যাঙ্ক বিশেষ পরিস্থিতিতে আপনার অনুপস্থিতিতেই লকার ভেঙে বের করে নিতে পারে সমস্ত গচ্ছিত ধন। তবে আরবিআই এর গাইডলাইন অনুযায়ী, এই পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ব্যাঙ্ককেও মেনে চলতে হয় বেশ কিছু নিয়মাবলী।
ব্যাঙ্ক যেকোনো সময় ইচ্ছে করলেই গ্রাহকদের লকার ভেঙে তাদের গচ্ছিত সম্পত্তি বের করে নিয়ে নিতে পারে না। তাহলে কখন, কোন পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ? চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক যে, কোন কোন পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক নিজের গ্রাহকদের সঞ্চিত ধন লকার ভেঙে বের করে নিতে পারে।
১. ভাড়া না মেটালে— আসলে ব্যাঙ্কের লকার ব্যবহার করার জন্য প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া সেই ব্যাঙ্ককে দিতে হয়। যদি দুর্ভাগ্যবশত কোনও গ্রাহক সেই ভাড়া না মেটাতে পারেন, তাহলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে লকারটি ভেঙে ফেলার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।
২. গ্রাহক চাবি হারিয়ে ফেললে— নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাঙ্কের লকারের দু’টি চাবি থাকে। যার মধ্যে একটি গ্রাহকের কাছে, অন্যটি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে থাকে। গ্রাহক যদি তার নিজের চাবি হারিয়েও ফেলেন, তাহলে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানালে তারা সাহায্য করতে পারে। শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ লকার ভাঙতে পারে। যদিও প্রায় সাথে সাথেই ওই লকারের তালা পাল্টে ফেলা হয় এবং গ্রাহককে চাবি হারিয়ে ফেলার কারণে জরিমানা করা হয়।
৩. এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির নির্দেশ— পুলিশ, আর্মি, সিবিআই, ইডি– এরা চাইলে কোনও গ্রাহকের লকার বাজেয়াপ্ত করতে বা তা খুলে দেখতে চাইতে পারে। তবে এই ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক নিজের ইচ্ছেমতো কারোর লকার ভাঙতে পারে না। বরং, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে প্রথমে গ্রাহককে এই বিষয় সম্পর্কে ইমেলে অথবা লিখিত আকারে জানাতে হবে।
৪. নিষ্ক্রিয়তার কারণে— এই পয়েন্টটি হল সবথেকে প্রয়োজনীয়। অনেকের ক্ষেত্রেই এমন হয় যে, নিজের পছন্দের ব্যাঙ্কে লকার ভাড়া করলেও দীর্ঘদিন ধরে তা ব্যবহার করা হয় না। আর এখানেই আসে অন্যতম সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ব্যাঙ্ক চাইলে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়া লকার ভেঙে দেখতে পারে।
২০২১ সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকায় কিছু পরিবর্তন আনার পরেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের হাতে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়, যার সাহায্যে নিয়মিত ভাড়া দেওয়া হয় অথচ ব্যবহার করা হয় না, এমন লকার কর্তৃপক্ষ চাইলে ভাঙতে পারে।
এমনকি, গ্রাহকের খোঁজ না মেলা এবং প্রায় সাত বছর নিরুদ্দেশ থাকার কারণে লকারের ব্যবহার না হওয়ায় তার ভেতরে থাকা যাবতীয় কাগজপত্র ও সম্পদ গ্রাহকের নমিনির হাতে তুলে দিতে পারে ব্যাঙ্ক। তবে এসব ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি মানতে হয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে।
যেমন, গ্রাহককে বেশ অনেকদিন আগেই নোটিশ দিতে হবে। রেজিস্টার্ড ই-মেল আইডি এবং মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। এমনকি চিঠি ও এসএমএস ফেরত এলে গ্রাহককে খুঁজে বের করার জন্য একটি স্থানীয় ও আরেকটি ইংরেজি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
এমনকি লকার একবার খোলা হয়ে গেলে গ্রাহক সেই সম্পত্তির দাবি না করা পর্যন্ত সমস্ত সম্পত্তি একটি ফায়ারপ্রুফ সিন্দুকে ইনভেন্টরিতে সিল করে রাখা হয়। তবে, ব্যাঙ্কের লকার নিয়ে অকারণে ভয় পেতে হবে না। যদি আপনার অনুপস্থিতিতে কখনো লকার ভাঙা হয়, তাহলেও তা অত্যন্ত প্রয়োজনে অথবা বিপদের সময়েই করা হবে।
এমনকি লকার ভেঙে বের করা আপনার সম্পত্তি হয় আপনার উত্তরাধিকারকে দিয়ে দেওয়া হবে অথবা আপনি নিজে সেটি নিতে না আসা পর্যন্ত সামলে রাখা হবে। তাই বাড়ির থেকে ব্যাঙ্কের লকারই বেশি সুরক্ষিত, এমনই মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন