সমকালীন প্রতিবেদন : ভারতীয় রেলের ইতিহাসে যুক্ত হতে চলেছে এক নতুন পালক। বিশ্বে চিনেই প্রথম হাইস্পিড বুলেট ট্রেন চালু হয়। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হয়েছে হাইস্পিড বুলেট ট্রেন। এবার ভারতে। এবারে এই হাইস্পিড বুলেট ট্রেন চালু হতে যাচ্ছে ভারতে।
ভারতের ক্ষেত্রে অভিনবত্ব হচ্ছে, পাহাড়ের মধ্যে দীর্ঘ এক কিলোমিটার সুড়ঙ্গ কেটে তার মধ্য দিয়েই ছুটবে এই অত্যাধুনিক বুলেট ট্রেন। প্রথমে বন্দে ভারত, পরে বন্দে মেট্রো, আর এবার হাইস্পিড বুলেট। এই বুলেট ট্রেন ছুটবে ঘন্টায় ৩৫০ কিমি গতিবেগে।
বিজ্ঞানের কারবার বেগ নিয়ে। সেই বেগের চূড়ান্ত নিদর্শন হতে চলেছে এই বুলেট ট্রেন। গুজরাটের ভালসাদে মুম্বই-আমেদাবাদ হাই স্পিড রেল করিডোর প্রকল্পে বড় সাফল্য এল। বৃহস্পতিবার বুলেট ট্রেনের পথে প্রথম পর্বত সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এই টানেল দিয়েই হাই স্পিড বুলেট ট্রেনগুলি ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে। এই প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩৫০ মিটার দীর্ঘ এই টানেলের ব্যাস ১২.৬ মিটার এবং উচ্চতা ১০.২৫ মিটার। এই বিশেষ আকৃতির টানেলে ২টি হাই স্পিড ট্রেন ট্র্যাক থাকবে। একটি আপ ও একটি ডাউন লাইন।
এছাড়া, এই পথেই আরও বেশ কিছু টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে রেল দপ্তরের। মুম্বই এবং আমেদাবাদের মধ্যে ৫০৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্র্যাকে আরও ৬টি টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা আছে ন্যাশনাল হাই স্পিড রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের।
ভালসাদ বিভাগের এই প্রকল্পের প্রধান ম্যানেজার এসপি মিত্তলের কথায়, 'আমাদের কাছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হল এটি ভারতের প্রথম টানেল, যেখানে একটি ট্রেন ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে।' এই তীব্র বেগ ভারতকে আরও দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেবে বলে মনে করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সুড়ঙ্গ কাটার অসুবিধা প্রচুর। সব দিক খতিয়ে দেখেই কাজ করতে হয়েছে রেলকে। এই বিষয়ে প্রকল্পের কর্তা মিত্তল আরও বলেন, 'আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যে, কীভাবে টানেলটিকে একেবারে সোজা রাখা যায়।
কারণ, বুলেট ট্রেন ৩৫০ কিলোমিটার গতিবেগে প্রতি ঘণ্টায় ছুটবে এবং সামান্য বিচ্যুতিতেও বড় বিপদ ঘটতে পারে। তাই আমরা প্রতিটি কাজ খুব সূক্ষ্মভাবে করেছি। তাই এই সুড়ঙ্গে এক মিলিমিটারেরও বাঁক দেখা যাবে না।' ভারতের রেলমন্ত্রী ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
২০১৫ সালে প্রথম ভারতে বুলেট ট্রেন চালানো নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়। একাধিক দিক নিয়ে চলে গবেষণা। মাটির ধারণ ক্ষমতা, ট্রাকের শক্তি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা- এই সবগুলিই আসে আলোচনায়। শেষপর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া হয় তাতে।
প্রকল্পের আনুমানিক খরচ তখন ধার্য করা হয়েছিল ১ লক্ষ ৮ হাজার কোটি টাকা। ৮ বছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল সেই প্রকল্পের কাজ। অর্থাৎ, এই বছরই চাকা গড়ানোর কথা ছিল বুলেট ট্রেনের। কিন্তু বাস্তবে তা হয় নি। মূলত জমিজটের কারণেই কিছুটা দেরি হয়। এখন অপেক্ষা সেই শুভক্ষনের। গুজরাটবাসী সহ আপামর ভারতবাসী সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন