সমকালীন প্রতিবেদন : রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, দেশবাসীর সঞ্চয় কমছে। এই নিয়েই দ্বিধাবিভক্ত অর্থনীতিবিদরা। একদল মনে করেন সঞ্চয় কমিয়ে সেই টাকা যদি বাজারে খাটে, তা দেশীয় অর্থনীতির পক্ষে ভালো।
কিন্তু অপর অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ভবিষ্যত সুরক্ষার জন্য সঞ্চয় করা শুধু অপরিহার্য নয়, সঞ্চয় না থাকলে মানুষ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়ে, যা তার জীবনের ক্ষেত্রে বড়ো ঝুঁকি।
ভোগবাদের ফলেই মানুষের সঞ্চয় কমছে। আর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এর অপর কারণ। সাম্প্রতিক তথ্য যথেষ্ট উদ্বেগের। যে অর্থনীতিবিদরা সঞ্চয় কমাকে ভালো চোখে দেখছেন না, তাঁরা মনে করেন, সঞ্চয় হ্রাসের অন্যতম কারণ হল, সুদের হার কম হওয়া।
মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে সরকার গতবছর মে থেকে ধাপে ধাপে রেপো রেট বাড়ালেও তার প্রভাব সরাসরি পড়েছে সঞ্চয় এবং ঋণের সুদে। গত দু’টি অর্থবর্ষে যেভাবে সুদের হার সার্বিকভাবে কমেছে। তাতে কম সুদে গৃহঋণ নিয়েছেন সাধারণ মানুষ। ফলে মানুষের জীবন হয়ে যাচ্ছে EMI নির্ভর।
কিন্তু আর একদল অর্থনীতিবিদ বলছেন, বর্তমান সময়ে সঞ্চয় প্রকল্পে কম টাকা জমলেও তা ঘুরপথে সাধারণ মানুষের সম্পদ সৃষ্টিতেই কাজে লাগছে। স্টেট ব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী, সাধারণ মানুষ যদি এক টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনেন, তা ১৪ বছর পরে তাঁর কাছে ২ টাকা ১২ পয়সার সম্পদ হয়ে ফিরছে।
মানে আজ যদি ৩০ লাখ টাকা দিয়ে একটা ফ্ল্যাট কেনা হয়, তা ১৪ বছর পর ৬৪ লক্ষ টাকায় পৌঁছতে পারে। ওই ৩০ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য ১৪ বছরে সুদ দিতে হবে কমবেশি ২২ লক্ষ টাকা। অর্থাত্ সেক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষই লাভবান হচ্ছেন।
জীবনকে মসৃন রাখতে আয়ের একটা অংশ সঞ্চয় করতে হবে। তা আয়ের অন্তত ১০ থেকে ২০ ভাগের মধ্যে হওয়া উচিত। এই বিষয়ে অবশ্য ভারতের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অনন্ত ভি নাগরাজন বলছেন, বাজারে কেনাকাটা বাড়ছে, আর্থিক বাজারে গতি রয়েছে অথচ সঞ্চয় কমছে, এটা দারুণ খবর।
কারণ, সাধারণ মানুষ প্রথাগত সঞ্চয়ের পরিবর্তে মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন তারা। সাধারণ মানুষ এসআইপি এবং শেয়ারে লগ্নি করছেন। এটাকে তিনি শুভ লক্ষণ বলছেন।
অশুভ ইঙ্গিত অবশ্য অন্য জায়গায় আছে। তা হলো, সঞ্চয় কমার সঙ্গে সঙ্গে ঋণ বাড়ছে ভারতবাসীর। আয় না বেড়ে যদি ধার বেড়ে যায় তাহলে বিপদ। ফলে, একইসঙ্গে সঞ্চয় কমা এবং ধার বেড়ে যাওয়া অর্থনীতির পক্ষে ভালো লক্ষণ নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন