সমকালীন প্রতিবেদন : হাতে আর মাত্র কয়েকটি সপ্তাহ। তারপরেই শুরু হয়ে যাবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব, দুর্গাপুজো। ফলে বাংলা জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্টডাউন। ঘরের মেয়ে উমার আগমনে বাংলা জুড়ে উৎসবের সময়কাল শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আর দুর্গাপুজোর একটি বিশেষ রীতি হল সন্ধিপুজো।
মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে যে পুজো হয়, তাকে বলে ‘সন্ধিপুজো’। সন্ধিপুজোয় দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয় নবরূপে। অষ্টমীর রাতে দেবী দুর্গার পুজো করার সময় অশোক গাছের ৯ টি পাতা, ১ টি কলসি দেবী দুর্গার ছবির সামনে রেখে ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, নরসিংহী, ইন্দ্রাণী এবং চামুণ্ডা দেবীর পুজো করা হয়। তারপর দেবী দুর্গার মন্ত্র ১০৮ বার জপ। বাঙালি হিন্দুরা সন্ধিপুজোর উপোস করেন পবিত্রভাবে। এই পুজোয় ১০৮ টি করে পদ্ম এবং প্রদীপের প্রয়োজন হয়।
হিন্দুধর্মে সন্ধিপুজোর মাহাত্ম্য বিরাট। অষ্টমী তিথি শেষ হওয়ার শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথি শুরু হওয়ার প্রথম ২৪ মিনিটকে বলা হয় সন্ধিক্ষণ। এবছর ২২ অক্টোবর বিকেল ৪ টে ৫৪ মিনিট থেকে ৫ টা ৪২ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপুজোর সময়ক্ষণ রয়েছে। পঞ্জিকা অনুযায়ী বলিদান সেরে ফেলতে হবে বিকাল ৫ টা ১৮ মিনিটের মধ্যে। এই সময়ক্ষণ শেষ হচ্ছে ৫ টা ৪২ মিনিটে।
সাধারণত ছাগলের পাশাপাশি কোনও কোনও জায়গায় আখ, কলা, চালকুমড়ো ইত্যাদি দেবীকে নিবেদন করা হয়ে থাকে। কথিত আছে, সংযমী হয়ে ভক্তিভরে নিষ্ঠার সঙ্গে উপবাসী থেকে সন্ধিপুজো করলে যমের হাত থেকেও মুক্তি মেলে।
অর্থাৎ জীবনের শেষ সময় দেবীর কৃপায় যমের স্পর্শও রোখা যায়। আবার বলা হয়, নিষ্ঠা এবং ভক্তির সঙ্গে সন্ধিপুজো করলে যে ফল পাওয়া যায়, তা সারাবছরের পুজোর ফললাভের সমকক্ষ।
পুরাণ অনুসারে, অষ্টমী তিথি এবং নবমী তিথির মিলনকালে মা দুর্গা আবির্ভূতা হন চামুণ্ডা রূপে। এই সময়েই মা দুর্গা ‘চণ্ড’ ও ‘মুণ্ড’ নামে দুই দোর্দণ্ড অসুরকে বধ করেছিলেন। চামুণ্ডা মহাশক্তির এক ভয়াল রূপ। কথিত আছে, অসুররাজ শুম্ভ এবং নিশুম্ভের প্রধান দুই সেনানায়ক ছিলেন ‘চণ্ড’ ও ‘মুণ্ড’।
এই দুই ভয়ঙ্কর অসুরকে বধ করার জন্য দেবী দুর্গা চামুণ্ডা রূপ ধারণ করেন। তাই এই বিশেষ সময়ে বিশেষ পুজো করলেই কৃপালাভ হয় মা দুর্গার। এই বিশ্বাস গাঁথা হয়ে আছে বাঙালির মনে। তাই এই রীতি চলে আসছে হাজার বছর ধরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন