সমকালীন প্রতিবেদন : বৃহস্পতিবারও ভয়াবহ পরিস্থিতি সিকিমে। প্রবল বন্যা ও ধস নেমে তছনছ হয়ে গিয়েছে উত্তর সিকিম। দুর্যোগের কবলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। এখনো সেখানে ২২ সেনা সহ নিখোঁজ ১০০-র বেশি মানুষ।
ঘটনার সূত্রপাত গত পরশু মাঝরাতে। এদিন ভোর হওয়ার আগে আচমকা হড়পা বানে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে পাহাড়ি নদী তিস্তা। মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বানের জেরে বর্তমানে প্রায় বিপর্যস্ত সিকিম। সেখানে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
অন্যদিকে, সিকিমে নিখোঁজ হওয়া ২২ জন সেনা জওয়ানের খোঁজ এখনো মেলেনি। সেখানের সেতু ভেঙে সেনা ছাউনি ভেসে যায় গতকাল সকালে। তার পর থেকেই নিখোঁজ ওই জওয়ানরা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়েছে ধস নামায়। আজ সকালে সেখানের ২৯ মাইল এলাকার কাছে বড়সড় ধস নামে। ধসের ফলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক এখন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
তিস্তা ব্রিজ থেকে সিকিম যাওয়ার পথে বেশ কিছু জায়গায় বড় আকারের ধসের কারণে জাতীয় সড়ক নিচের দিকে বসে গিয়েছে। জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গা ধীরে ধীরে তিস্তার নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। এখনো ওই ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্যে আটকে আছেন হাজার হাজার পর্যটক।
কিন্তু কীভাবে ঘটল সিকিমের এই মহা বিপর্যয়? সত্যিই কী মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতেই ফেটে গেল লোনাক হ্রদ? একাংশের বিজ্ঞানীরা বলছেন, সিকিমের এই বিপর্যয়ের নেপথ্যে থাকতে পারে নেপালের ভূমিকম্প। ইসরোর আওতাধীন, ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার, দক্ষিণ লোনাক হ্রদের তিনটি উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেছে।
ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ লোনাক হ্রদের আয়তন ১০০ হেক্টরেরও বেশি কমেছে। এই গায়েব হয়ে যাওয়া ১০০ হেক্টর জলই তিস্তা নদীর অববাহিকায় আকস্মিক বন্যার সূত্রপাত করেছে। প্রাথমিকভাবে ভিলেন মনে করা হচ্ছে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিকেই। যেমনটা ঘটেছিল ২০১৩ সালে কেদারনাথের বন্যার সময়।
রবিবার থেকেই লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে সিকিমে। কাজেই এই সম্ভাবনা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এদিকে, সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের মতে, হ্রদটির ফেটে যাওয়ার পিছনে নেপালের ভূমিকম্পের হাত থাকতে পারে। কারণ, মঙ্গলবার অর্থাৎ এই বিপর্যয় ঘটার ঠিক একদিন আগে, নেপালে পরপর চারটি ভূমিকম্প হয়েছিল। যা অনুভব করা গিয়েছিল, উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকেও।
সবথেকে জোরালোটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.২। এই ভূমিকম্প সিকিমে আকস্মিক বন্যার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন ওয়াটার কমিশনের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, আগে থেকেই হ্রদটি দুর্বল অবস্থায় ছিল। যে কোনও সময় ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। কাজেই, ভূমিকম্পের ফলে হ্রদটি ফেটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
তবে যে কারণেই হোক না কেন, সিকিমের এই বিপর্যয় যে প্রকৃতির এক ভয়াল রূপের প্রকাশ, তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু আমাদের কারণেই কি প্রকৃতি এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে না? প্রশ্নটা কিন্তু উঠছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন