সমকালীন প্রতিবেদন : বুধবারের হড়পা বানে কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছে উত্তর সিকিম। এই বিপর্যয়ের জেরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৫তে। সিকিমের লোনাক হ্রদ ফেটে জল বেরিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার মারাত্মক আঁচ পড়েছে এরাজ্যের উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ প্রান্তে।
পাহাড়ি পথে জলের তোড়ে খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে বহু বাড়ি-ঘর। সেনা-জওয়ান থেকে শুরু করে সিকিমের মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বলি হয়েছেন সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে আপাতত পর্যটকদের সিকিম এড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে এখনও সিকিমের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে রয়েছেন বহু পর্যটক। সংখ্যাটা হাজার চারেকেরও বেশি হতে পারে। তবে এই পরিণতি হতে পারে ভারতের আরো দুটি রাজ্যের। কয়েকবছর আগে, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট সিকিমে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল।
উপগ্রহচিত্রের মাধ্যমে লোনকের মতো ৩২০টি হিমবাহসৃষ্ট হ্রদের সন্ধান পেয়েছিল তারা। যেগুলির মধ্যে ১৪টিকে তারা বিপজ্জনক বলে জানায়। আবার অন্য এক সমীক্ষার দাবি, এই রকম হিমবাহসৃষ্ট হ্রদের অববাহিকায় ভারতের ৩০ লক্ষ লোকের বাস। যেগুলি সিকিম এবং কেদারনাথের মতো ভয়ানক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আর এই হ্রদগুলি রয়েছে হিমাচলপ্রদেশ এবং অরুণাচলপ্রদেশ রাজ্যে।
তবে, শুধু ভারতেই হিমবাহসৃষ্ট হ্রদের নিম্ন অববাহিকায় এই বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস করেন। আর এই সংখ্যাটা দেড় কোটির কাছাকাছি বলে জানা গেছে। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৩০টি দেশে এই রকম ১০৮৯টি হিমবাহসৃষ্ট হ্রদের অববাহিকা রয়েছে, যে অববাহিকায় প্রায় ন’কোটি মানুষের বাস।
তার মধ্যে দেড় কোটি মানুষের বাস এই ধরনের হিমবাহসৃষ্ট হ্রদের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যেই। স্বাভাবিকভাবেই এইধরনের হ্রদের যত কাছে বসবাস হবে, বিপদ ততই বেশি। বিশ্বে এমন চারটি দেশ রয়েছে, যেখানে এই হিমবাহসৃষ্ট হ্রদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
অর্থাৎ, যদি বিশ্বে ১০৮৯টি হিমবাহসৃষ্ট হ্রদ থাকে, তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি হ্রদ এই চার দেশে রয়েছে। সেই চারটি দেশ হল— ভারত, পাকিস্তান, পেরু এবং চিন। তাই একথা আমাদের মাথায় রাখতেই হবে যে, আমাদের দেশও কিন্তু রয়েছে বিপদসংকুল পরিস্থিতির মধ্যে। তাই সাবধান হতে হবে, আর হতে হবে প্রকৃতির প্রতি দয়াশীল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন