Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩

উত্তর ‌কলকাতার এবারের কিছু পুজো পরিক্রমা

Kolkatar-Pujo

উত্তর ‌কলকাতার এবারের কিছু পুজো পরিক্রমা

                                 স্বপন ঘোষ                                                        

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের সেরা পার্বণ নিঃসন্দেহে দুর্গা পুজো। বাঙালি বলতে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কথাই বলছি। এর বাইরে বাংলাদেশ, ত্রিপুরা, আসাম বা পৃথিবীর কোণে কোণে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। ধর্মীয় আচারের ঊর্ধে উঠে দুর্গাপুজো কবেই প্রাণের উৎসব হয়ে উঠেছে। আর এখন তো আমাদের উৎসব আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে গেছে- ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় আমাদের উৎসব প্রতিষ্ঠিত। 

পশ্চিমবঙ্গের এমন কোনও জেলা, শহর, গ্রামাঞ্চল নেই যেখানে দুর্গাপুজো হয় না। তবু বাদকুল্লা, বনগাঁ বা হালের কল্যাণীর দুর্গাপুজোয় উন্মাদনা থাকলেও ধারে-ভারে কলকাতার পুজোর সঙ্গে কোনওভাবেই তা তুলনীয় নয়। ঐতিহ্যে, বনেদিয়ানায়, আয়োজনে, আড়ম্বরে কলকাতার দুর্গাপুজোর সঙ্গে পৃথিবীর কোনও অঞ্চলের দুর্গাপুজো তো বটেই, অন্য উৎসবের তুলনাও একান্ত দুর্লভ। 

বনেদিয়ানা এবং উৎসব আয়োজনের আঙ্গিকে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায় আবার বিস্তর ফারাক চোখে পড়ে। প্রাচীনতর উত্তর কলকাতার পরতে পরতে ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয়। প্রতিমা নির্মাণে সনাতন একচালাধর্মী ধরণ, অঙ্গসজ্জায় শোলা ও জমকালো গয়নার ব্যবহার, প্যান্ডেলে স্থায়ী ঠাকুরদালানের প্রাধান্য উত্তরের ঠাকুরে এখনও দেখা যায়। 

বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনে নেমে বামদিকে এগোলেই বেলগাছিয়া কেন্দ্রীয় সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোতে বনেদিয়ানা ধরে রাখার চেষ্টা লক্ষ্য করি। সাবেকিয়ানা ও আভিজাত্যের সহাবস্থান লক্ষ্য করবেন বাগবাজার, শোভাবাজার, আহিরীটোলা, হাতিবাগান, কলেজস্কয়ার বা মহম্মদ আলি পার্কের পুজোতে। 

এইসব পুজোতে বারোয়ারী পুজোর বৈশিষ্ট্য এখনও সজীব। প্রতিমা সজ্জায় কাপড় ও ডাকের সাজ, পুজোপদ্ধতিতে ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদ, মণ্ডপসজ্জায় সাবেকিয়ানা আপনার নজর এ‌ড়াবে না। বাগবাজারের মত কিছু জায়গাতে বড়ো উৎসব প্রাঙ্গণ মেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। 

তবে ইদানিং উত্তর কলকাতাতেও থিম পুজোর প্রচলন বাড়ছে। সর্বজনীন বা বারোয়ারী পুজোর বাইরে ক্লাবের পুজোতে থিমের প্রচলন অনেক বেশি। দমদম পার্কের তরুণ সংঘ ও ভারতচক্রের পুজোতে থিম হিসাবে সাম্প্রতিক বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। 

ভিআইপি রোডের ওপরে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের মেগা পুজোতে এবারের বিষয় প্যারিসের ডিজনিল্যান্ড। বেলগাছিয়া বারোয়ারীতে বিষয়ভাবনা ক্ষমতার লড়াই- চেয়ারের কাড়াকাড়ি। টালা প্রত্যয় তার বিপুল ও ব্যয়বহুল আয়োজনে আমাদের বিস্মৃত অতীতকে স্মরণ করাতে চেয়েছে। 

টালা বারোয়ারীর বিষয় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি ও সাহিত্য। কুমারটুলি সর্বজনীনের থিম মাতৃশক্তির বন্দনা। কুমারটুলি পার্কে রাজনৈতিক দলাদলিকে থিম হিসাবে নেওয়া হয়েছে। তবে থিমের পুজো হলেও এখানে গোটা মাঠকে মেলার চেহারা দিয়ে আয়োজন-বিনোদনে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করা হয়েছে। 

হাটখোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসবের বিষয় "স্নেহের মৃত্তিকা"- মাটি এবং মায়ের মধ্যেকার নিবিড় সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে। শোভাবাজার-বেনিয়াটোলা সর্বজনীন আবার ভৌগলিক বিষয়কে থিম হিসাবে উপস্থাপন করেছে। ঐতিহ্যশালী এই পুজোমণ্ডপের বিষয় ভাবনায় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মধ্যে দিয়ে দেবীর আবাহন প্রকৃতির রুদ্ররূপের মাঝে আশার আগমনবার্ত্তা প্রকাশ করে। 

কাশী বোস লেনের পুজো এবছর উত্তর কলকাতার অন্যতম সেরা পুজো। বিশ্বজুড়ে নারীর লাঞ্ছনা তাদের এবছরের থিম। মধ্য কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কয়ার এবছরের মেগা পুজোর তালিকায় অন্যতম নাম। অযোধ্যার নির্মীয়মাণ রামমন্দিরকে তুলে ধরে তারা এবছর দর্শক আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই পুজোর উদ্বোধক। উপস্থিত হয়েছেন আরও অসংখ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। 

পুজোকে জনসংযোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার রেওয়াজ ইদানিং বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তো বটেই, বিরোধী দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও জনসংযোগের লক্ষ্যে কোনও না কোনও পুজোর দখল নিতে তৎপর। 

পুজোকে ঘিরে 'larger than life' ইমেজ উপস্থাপনে সকলেই সজাগ -সেই কারণে পুজোর ক'টা দিন দান-ধ্যান, ভুরি-ভোজ দেদার চলবে। কলকাতার সীমানা ছাড়িয়ে এই বাহ্যাড়ম্বরের সংস্কৃতি এখন শহরতলি এমনকি গ্রামাঞ্চলকেও আচ্ছন্ন করছে। সর্বত্র এখন একই থিম : "আমার পুজো", বাকি সবাই কেবল প্রসাদ পাবে। মাদুর্গা সবই দেখছেন!



                 ‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন