Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩

কৈলাশের পথে উমা, তবুও ভিড় যেন মোটেও কমছে না বনগাঁর পুজো মন্ডপগুলিতে

Bangaon-Puja-Mandap

সম্পদ দে :'‌পুজো আসছে'। যতক্ষণ এই ভাবনাটা মনে আছে, ততক্ষণই একটু অন্য অনুভূতি। আর এসে গেলে এই সময়টা যে কখন দেখতে দেখতে কেটে যায়, তা টেরই পাওয়া যায় না। যেমন কোথা দিয়ে যে আজ দশমীর দিনটি চলে এলো, তা যেন বোঝাই গেল না। বাপের বাড়ি ছেড়ে মঙ্গলবারই উমা রওনা দিলেন শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে। আরও এক বছরের অপেক্ষা। 

এরইমধ্যে এবারের মতো আরও একবার বনগাঁর পুজো নিয়ে সাজানো হল এই প্রতিবেদনটি। বনগাঁর দুর্গাপুজোর কথা উঠলেই যেন প্রত্যেকের মাথার একটা কোনায়, কোথাও না কোথাও জায়গা করে নেয় শিমুলতলা আয়রন গেট স্পোর্টিং ক্লাব। বেশ কিছু বছর ধরেই বড় বাজেটের নজর কাড়া মন্ডপের জন্য যথেষ্ট নাম রয়েছে আয়রন গেট ক্লাবের। আর এবারও তারা তাদের সেই দায়িত্ব থেকে পিছুপা হননি।

আয়রন গেট স্পোর্টিং ক্লাবের এবছরের পুজো মণ্ডপ বৃন্দাবনের প্রেম মন্দিরের আদলে। মন্ডপের কারিগররা রাধাকৃষ্ণের এই মন্দিরের আদলে তৈরি পুজোমণ্ডপ সাজিয়ে তুলেছেন বেশ অন্যরকমভাবে। মন্ডপের বাইরের অংশ সাজানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বাসন রাখার ঝুড়ি, সবজি রাখার ঝুড়ি দিয়ে। 

সেই সঙ্গে মন্ডপের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিক এবং সেরামিকের তৈরি থালা, বাটি, গ্লাস। তবে একটু দূর থেকে দেখলেই আর বোঝার উপায় নেই যে, এত সুন্দর একটি মণ্ডপ এইরকম প্রতিদিনকার সাধারণ ব্যবহারিক সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয়েছে। মণ্ডপে প্রবেশ করার অংশটি সাজানো হয়েছে শঙ্খ দিয়ে। সেইসঙ্গে মণ্ডপের অন্দরমহল সুসজ্জিত হয়েছে কাঁচের টুকরো দিয়ে তৈরি বিভিন্ন কারুকার্যের মাধ্যমে। কোথাও রামায়ণের কাহিনীর খন্ডচিত্র, তো কোথাও মা দুর্গার রাবণ বধের। পুরোটাই সাজানো হয়েছে কাচের ছোট বড় বিভিন্ন টুকরো দিয়ে।

বাঙালির গোটা একটা বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত কয়েকটি দিন বাংলা এবং বাঙালি তাদের বৃহত্তম উৎসব দুর্গাপুজোয় মেতে উঠেছিলেন। আর এই দুর্গোৎসব উপভোগ করার জন্যই অপেক্ষা করে ছিল বনগাঁ সহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা এবং শহরের মানুষজন। কারণ, কলকাতার পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিখ্যাত দুর্গাপুজোর শহর হল বনগাঁ।

বনগাঁর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী গান্ধীপল্লী বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব। এই বছর তারা ৭৫ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। আর সেই উপলক্ষেই এবার তাঁদের মন্ডপের থিম ছিল হংকংয়ের ম্যাকাও শহরের গ্র্যান্ড লিসবোয়া হোটেল। সুদক্ষ কারিগরদের সাহায্যে প্যান্ডেল তৈরি হয়েছিল মূলত বাঁশ, প্লাইউড এবং কাঁচের ছোট বড় বিভিন্ন প্যানেল দিয়ে। 

বনগাঁ শহরের বিরাট আকার ও বড় বাজেটের পুজোর মধ্যে না পড়লেও, তাদের সহজ সরল এবং সুন্দর মণ্ডপ, মায়ের রূপ যে প্রতিবছর সকলের মন ভরিয়ে তোলে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বনগাঁ শহরের সেই পুজো কপিটি হল বনগাঁ স্পোটিং ক্লাবে, যাকে অনেকেই বিএস ক্লাব নামে বেশি চেনেন। এই বছর তাদের পুজোর থিম ছিল আগমনী। বনগাঁর এই ক্লাবের পুজোর প্রতিটি আয়োজন এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে মূলত মহিলারাই বেশিরভাগ দায়িত্বে থাকার কারণেও পরিচিত। এবছরও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি।

ক্লাবের এবারের পুজো মণ্ডপ তৈরির পেছনে ছিল এক অসাধারণ বার্তা। মূলত প্রকৃতির কথা চিন্তা করেই এবার তাদের পুজোমণ্ডপ তৈরি হয়েছিল সম্পূর্ণভাবে পচনশীল বস্তু দ্বারা, যা কিনা পরিবেশের কোনও ক্ষতি করবে না এবং সহজেই মিশে যাবে মাটির সঙ্গে। মন্ডপ তৈরিতে তারা এবার কাজে লাগিয়েছিল বাঁশের কঞ্চি, শোলার কদম ফুল, শাল পাতা, নারকেলের ছোবড়া, গাছের শিকড়, বাঁশ, শুকনো কচুরিপাতা দিয়ে তৈরি ফুল, খেঁজুর গাছের পাতা ইত্যাদি। আর এই মন্ডপ তৈরি করেছেন ক্লাবেরই দুই সদস্য দেবাঞ্জন এবং কৌশিক দাস।

বনগাঁর হাসপাতাল কালীবাড়ির বলাকা সমিতির এইবারের মন্ডপ শয্যার মূল প্রেরণা সবুজ পুজো। এই বছর ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল, সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব মন্ডপসজ্জা এবং পুজোর ব্যবস্থা করা ও সেই সঙ্গে দর্শনার্থীদেরকেও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করা। মন্ডপ তৈরীর ব্যবহার করেছেন শুকনো পাতা, বিচুলি, পাটকাঠি, বাঁশের কঞ্চি, খেজুর গাছের পাতা ও এছাড়াও বিভিন্ন রকম গাছের পরিত্যক্ত ও শুকনো অংশের। মন্ডপের ভিতরের অংশ সেজে উঠেছে মাদুর, বিভিন্ন গাছের ফল ও ফুল, বেতের ঝুড়ি ইত্যাদি দিয়ে। 

বনগাঁর মতিগঞ্জের ঐক্য সম্মেলনী এইবছর ৫৭ তম বর্ষে পা দিয়েছে। এইবার যদিও অন্যান্য বছরের মত বিরাট আকারের মন্ডপ না হলেও তারা কিন্তু তাদের সহজ সরল মন্ডপ ও এর পেছনের অনন্য বার্তার সাহায্যে ইতিমধ্যেই এক আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন দর্শনার্থীদের মনে। ঐক্য সম্মেলনীর এই বছরের থিম, সেফ দা বার্ডস বা পাখিদের কে বাঁচাও। 

এগিয়ে চলো সংঘের (‌৩ নম্বর টালিখোলা)‌ এবার ৫৬ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। আর সেই উপলক্ষেই তাদের পরম্পরা অনুযায়ী এই বছরও দর্শনার্থীদের চোখ ধাঁধিয়ে তুলতে পুজো মণ্ডপের থিম হিসেবে তারা নিয়ে এসেছে প্যারিসের ডিজনিল্যান্ড। প্রায় ৮০ ফুট চওড়া ও ৭০ ফুট উঁচু এই মন্ডপ তৈরির কাজ কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছিল পয়লা বৈশাখ থেকেই। মন্ডপের বাইরে এবং ভেতর মিলিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি কাঁচের স্টোন। 

বনগাঁর বুকে এ যেন সত্যিই উঠে এসেছে রাজস্থানের এক টুকরো রাজমহল। অভিযান সংঘের এমন নজর কাড়া মন্ডপ দেখে চমকে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। যশোর রোডের একদম ধারেই অভিযান সংঘের গড়ে তোলা মন্ডপ কিন্তু প্রতিবছরই এক একটি নতুন চমক এনে দেয় দর্শনার্থীদের। সংকীর্ণ জায়গার মধ্যেও যে কিভাবে অভূতপূর্ব পুজো করা যায়, তা যেন দেখিয়ে দেন ক্লাবকর্তারা। দর্শনার্থীদের জন্য মন্ডপের দুদিক দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ভেতরে প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্ডপের ভেতরটিও অসাধারণভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

বনগাঁর দুর্গাপুজো দেখতে বেরিয়ে প্রতাপগড় মাঠে বসে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেবো না, তা কি হয়! দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই কিন্তু বনগাঁ প্রতাপগড় ক্লাবের পুজোয় ভিড় জমে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীদের। বড় একটি মাঠ থাকার সুবিধায় দর্শনার্থীদের ভিড় মূলত জমে ওঠে বিশাল মেলাকে কেন্দ্র করে। গোটা বনগাঁয় পুজো দেখা শেষ হয়ে গেলে বেশিরভাগ মানুষজনের আস্তানা হয়ে ওঠে প্রতাপগড় মাঠের নরম ঘাস। হাজার হাজার মানুষ তাদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বসে সময় কাটাতে পছন্দ করেন এখানে।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন