সমকালীন প্রতিবেদন : গত বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতীয় রেল যেভাবে আধুনিকতাকে অবলম্বন করে এগিয়ে যাচ্ছে তা দেখে বেশ খুশি বেশিরভাগ ভারতীয়রাই। আর এইবার পরিবহন এবং পরিবেশ– দুটির কথা ভেবেই ভারতীয় রেল আনতে চলেছে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, হাইড্রোজেন ফর হেরিটেজ প্রকল্প।
এই উদ্ভাবনী উদ্যোগের লক্ষ্য হল, ঐতিহ্যবাহী পর্যটন ট্রেনগুলিকে পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন-চালিত ট্রেনে রূপান্তর করা, যা কিনা ভারতের মূল ৮টি হেরিটেজ সাইটগুলিতে চালানো হবে৷ রেলওয়ে ৮টি আইকনিক হেরিটেজ ট্র্যাকে ৩৫টি হাইড্রোজেন-জ্বালানিযুক্ত ট্রেন মোতায়েন করার পরিকল্পনা করেছে।
হেরিটেজ রুট হিসেবে যে আটটি ট্র্যাককে বেছে নেওয়া হয়েছে সেগুলি হল—
১| ঐতিহাসিক দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে,
২| মুগ্ধ করা মাথেরান হিল রেলওয়ে,
৩| মনোমুগ্ধকর কাংড়া উপত্যকা রুট
৪| মনোরম কালকা–সিমলা রেলওয়ে,
৫| নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে,
৬| মাড়োয়ার-গোরামঘাট রেলওয়ে,
৭| বিলমোড়া ওয়াঘাই
এবং
৮| পাতালপানি কলাকুণ্ড।
এই রুটগুলির প্রত্যেকটিই শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্য দিয়ে বোনা, যেখানে একবার হাইড্রোজেন ট্রেন চালু হয়ে গেলে ভ্রমণকারীদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় ভ্রমণের স্মৃতি তৈরি করে দেবে। সব থেকে খুশির খবর এই যে, ভারতের প্রথম এই হাইড্রোজেন ট্রেনের একটি চলবে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং হিমালয়ান ন্যারোগেজ রেলওয়ে রুটে।
রোলিং স্টক প্রোগ্রাম ২০২৩-২৪ এর অধীনে অনুমোদিত ৩৫টি ট্রেন-সেট রেকের প্রতিটিতে ৬ টি করে বগি রয়েছে, যা একটি আরামদায়ক এবং বিলাসবহুল ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তৈরি করেবে। প্রতিটি ট্রেন তৈরীর খরচ আনুমানিক ৮০ কোটি টাকা। তবে এছাড়াও প্রয়োজনীয় স্থল পরিকাঠামোর জন্য অতিরিক্ত ৭০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে।
পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসাবে প্রায় ১১২ কোটি টাকা খরচে বিদ্যমান ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট, উত্তর রেলের জিন্দ-সোনিপাত সেকশনে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল দিয়ে রেট্রো ফিটমেন্ট করা হবে। রেলের ১৭ তম লোকসভার স্থায়ী কমিটি এই উদ্যোগের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে। কারণ, এই প্রযুক্তি একবার সফল হলে এটি একটি সবুজ এবং পরিচ্ছন্ন ভবিষ্যতের দিকে দেশের পাশাপাশি তার রেল পরিষেবাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আরও সাহায্য করবে৷
গোটা পৃথিবীতে হাইড্রোজেন ট্রেনের প্রযুক্তি খুব বেশি দেশের কাছে নেই। গোটা কতক দেশ যেমন– জার্মানি, চীন এবং ফ্রান্স এই টেকনোলজির উপরে কাজ করে এমন ট্রেন তৈরি করতে পেরেছে। আর এরপরেই ভারত এমন একটি দেশ, যে নিজেদের দেশে এমন একটি ট্রেন তৈরি করতে চলেছে।
ভারত সরকার হাইড্রোজেন ফিউলের সাহায্যে চলা ট্রেনের ওপর বেশি করে জোর দিতে চাইছে। কারণ, হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনে ডিজেল ইঞ্জিনের মতো কোনও প্রকার দূষণ সৃষ্টি করবে না। হাইড্রোজেন ট্রেনের জ্বালানি থেকে কোনওরকম ক্ষতিকারক গ্যাস বেরোনোর বদলে বেরোয় জলের বাষ্প। তবে হাইড্রোজেন ট্রেন চালানোর অন্যতম সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এর খরচ। যদিও ভারতীয় রেল আশা করছে, তারা অতি দ্রুত অনেক সস্তায় হাইড্রোজেন ফিউল তৈরি করার বন্দোবস্ত করে নেবে, যার সাহায্যে এই ট্রেন চালানোর খরচও ভবিষ্যতে অনেক কমিয়ে আনা যাবে।
যেহেতু গোটা দেশবাসী এই হাইড্রোজেন-চালিত ট্রেনগুলি চালু করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, সেই জন্য রেলওয়েও চেষ্টা করছে যত দ্রুত সম্ভব এই ট্রেন তৈরির কাজ শেষ করতে। ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের একটি বক্তব্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের ভেতরেই এই ট্রেন তৈরির কাজ শেষ হবে। আর তারপর আগামী বছরের শুরুর দিকেই দেশের বিভিন্ন হেরিটেজ রুটে এই ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়ে যাবে৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন