সমকালীন প্রতিবেদন : এক বড় বিপদের সম্মুখীন গোটা বিশ্ব। অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলছে ব্যাপক দ্রুত হারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যান্টার্কটিকার বরফ দ্রুত গলে যাওয়ায় গভীর সমুদ্রের স্রোতের প্রবাহ কমছে এবং এইরকম চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই প্রবাহ ৪০ শতাংশ বন্ধ হয়ে যাবে।
এই উদ্বেগজনক গবেষণাটি বিশ্বজুড়ে এক চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, বিজ্ঞানীরা আগামী ১০০ বছরে আসতে চলা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। বিজ্ঞানীদের করা এই গবেষণায় উঠে এসেছে যে, জীবাশ্ম জ্বালানির অত্যধিক ব্যবহার এবং নির্বিচারে বন উজাড়ের মতো মানবসৃষ্ট কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরূপ প্রভাব অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহগুলিকে সমানে দ্রুত হারে গলিয়ে চলেছে, যা কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে জমে আছে। ফলে সেই বরফ গলা জল সমুদ্রের সঙ্গে মিশে সাগরের ভারসাম্য নষ্ট করবে।
অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বরফ আরও দ্রুত গলতে শুরু করেছে, যার ফলে সমুদ্রে জলের প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। গভীর সমুদ্রের ভেতরকার স্রোতগুলি বিশ্বকে তার প্রয়োজনীয় তাপ, অক্সিজেন, কার্বন এবং পুষ্টি সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এইভাবে আশঙ্কাজনক হারে বরফ গলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ জলের স্রোতের প্রবাহ ৪০ শতাংশ কমে যাবে। নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, যদি এমনটি হয় তাহলে সমুদ্রের ক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতা কমে যাবে।
ফলে পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বেড়ে যাবে। এটি ভবিষ্যতে গিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে সমুদ্রের বরফের স্তরের উপর একটি অস্থিতিশীল প্রভাব ফেলবে, যা আরো বেশি পরিমাণে বরফ গলিয়ে পরিবেশের আরও ক্ষতি করবে। উপরন্ত, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের গভীর স্রোতের ধীরগতি ইউরোপকে বর্তমান থেকেও আরও শীতল করে তুলবে, যা আবহাওয়াকে আরো গুরুতর দিকে পরিচালিত করবে।
সাগরে মিষ্টি জল মিশে গেলে সমুদ্রের জলের লবণাক্ততা কমে যাবে, যা সামুদ্রিক বিভিন্ন জীবের ওপর বিপর্যয় ডেকে আনবে। এমনকি প্রচুর সামগ্রিক প্রাণী বিলুপ্তির পথেও হাঁটতে পারে। যার ফলে জীব বৈচিত্র্যের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়।
বিজ্ঞানীদের করা সাম্প্রতিক এই গবেষণার ফলাফলগুলি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। বিজ্ঞানীদের মতে এই সমস্যাটির সমাধান করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জরুরি পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। এখন থেকেই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে এবং প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহারকে আরও উন্নতিকরণ করার জন্য সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে।
সরকারকে সেইসঙ্গে অবশ্যই বন এবং বন্যপ্রাণীর সুরক্ষাকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে পরিবেশে ইতিমধ্যেই হয়ে যাওয়া ক্ষতিকে পুনরুদ্ধার করা যায়। সবশেষে, অ্যান্টার্কটিকার বরফের দ্রুত গলে যাওয়া আসলে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।
আমাদের মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবী কেবলমাত্র আমাদের নয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেও এই পৃথিবীকে বাঁচানোর প্রয়োজন আছে। তাই, পরিবেশের আরও ধ্বংস রোধ করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে বিশ্বকে এখন থেকেই সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন