সম্পদ দে : শিক্ষকদের বাড়ির কাছে বদলি হওয়ার আবেদন নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে হাইকোর্ট। শেষ পর্যন্ত রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠে এসেছে এই বিষয়টি। আর তারপরেই নড়েচড়ে বসে সরকার। নতুন শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে অন্তত পাঁচ বছর পড়াতে হবে গ্রামীন কোনও স্কুলে।
এই নিয়মটা অনেকটা সরকারি চিকিৎসকদের মতো, যেখানে তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রথম পাঁচ বছর গ্রামে চিকিৎসা করার নিয়ম রয়েছে। যদিও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম এখনও চিন্তাভাবনার পর্যায়ে রয়েছে, কার্যকর হয়নি। তবে এই নিয়ম কার্যকর হলে নতুন চাকরি পাওয়া শিক্ষকদেরকেও চিকিৎসকদের মতো পাঁচ বছর চাকরি করতে হবে কোনও গ্রামীন স্কুলে।
উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্ট বহুদিন ধরেই লক্ষ্য করছিল যে, শহরের দিকে শিক্ষকদের বদলির প্রবণতা অনেক বেশি হচ্ছে। যার কারণে গ্রামীণ অঞ্চলের স্কুলগুলিতে শিক্ষক এবং পড়ুয়ার অনুপাতে এক বিশাল ফারাক দেখা দিচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এও দেখা গিয়েছে যে, একটি স্কুলে পড়ুয়াদের তুলনায় শিক্ষকের হার অনেক কম থাকা সত্ত্বেও তারা শহরের দিকে বদলি হতে চাইছেন।
আর এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের সমালোচনাও করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। হাইকোর্টের এই সমালোচনার পরেই রাজ্যের এমন কড়া পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এখানেই শেষ নয়, রাজ্য সরকার এমন আরও কিছু নতুন নিয়ম আনতে চলেছে, যা গোটা রাজ্যের শিক্ষানীতির রূপ পাল্টে দিতে পারে।
যার মধ্যে অন্যতম পয়েন্ট হলো, এখন থেকে রাজ্যের সমস্ত স্কুলে বাধ্যতামূলক রাখতে হবে বাংলা ভাষাকে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে এমন অনেক স্কুল রয়েছে, যেখানে বাংলা ভাষা শেখানোই হয় না। তবে এখন সেই দিন শেষ। ইংরেজির সাথে সাথে এখন থেকে শেখাতে হবে বাংলাও। তবে সেইসঙ্গে তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি ও সংস্কৃততেও জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তৃতীয় নিয়ম হলো, স্কুল শিক্ষকদের অন্যান্য পেশা নিয়ে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, স্কুল শিক্ষকদের একাংশ বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য স্কুল ছাড়াও আরও অন্য কোনও চাকরি করছেন। তবে একবার এই নিয়ম লাগু হয়ে গেলে, আর তা করা যাবে না। এমনকি নিয়ম না মানলে শিক্ষকরা যেখানে চাকরি করছেন, সেখান থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হতে পারে।
তবে শুধুমাত্র কি অন্য জায়গায় চাকরি করা! বহু স্কুল শিক্ষককেই দেখা যায়, নিজের বাড়িতে, পড়ুয়াদের বাড়িতে বা কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়াতে। নিয়মে বহু আগে থেকেই এই বিষয়ে মানা করা থাকলেও লুকিয়ে চুরিয়ে প্রাইভেট টিউশন চালিয়েই যাচ্ছেন একশ্রেণীর স্কুল শিক্ষক। তবে এখন থেকে এমন কোনও কাজ সহ্য করবে না রাজ্য সরকার। কোনও স্কুল শিক্ষককে স্কুলের বাইরে প্রাইভেট টিউশন দেওয়ার প্রমাণ মিললে স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি চলে যেতে পারে।
শিক্ষকদের পাশাপাশি নতুন শিক্ষানীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে চলেছে পড়ুয়াদের জন্যও। নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণী থেকেই চালু হতে পারে সেমেস্টার পদ্ধতি। এমনকি দশম শ্রেণীতে মাধ্যমিক পরীক্ষার ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সেখানেও সেমেস্টার পদ্ধতি আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। লেখাপড়ার পদ্ধতিতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
আগামী তিন বছরের ভেতরেই ধীরে ধীরে এমন পদ্ধতি চালু করার কথা বলা হয়েছে নতুন শিক্ষানীতিতে। এখন দেখার পালা যে, আদৌ এমন নীতি রাজ্যে লাগু হয় কিনা, আর হলেও তা কতদিনে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন