সমকালীন প্রতিবেদন : রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের মাটি ছুঁতেই চমকে উঠলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা! ঠিক যেমনটা আশা করেছিলেন তারা, চাঁদের দক্ষিণ মেরু কিন্তু তেমনটা মোটেও নয়। ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় যেন পুড়ছে চাঁদের মাটি। কিন্তু যে মেরু অঞ্চলে সূর্য ডুবলেই তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের নিচেও, সেখানে এত গরম মাটি কেন? এর যুক্তিতে বিজ্ঞানীরাই বা কি বললেন? বিস্তারিত দেখাবো এই প্রতিবেদনে।
বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ঐতিহাসিক ল্যান্ডিং করেছে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম। তারপর থেকেই নিজের কাজে লেগে পড়েছে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান। এর মাঝেই চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরু পৃষ্ঠের তাপমাত্রার মাপজোপ করে পাঠিয়েছে ইসরোতে।
বিজ্ঞানীদের মতে, পৃষ্ঠের কাছাকাছি ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রত্যাশিত ছিল না। চন্দ্রযান-৩ যেখানে অবতরণ করেছে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে, অনুমান করা হয়েছিল সেখানকার তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৩০ ডিগ্রির সেন্টিগ্রেডের মধ্যে ঘোরাফেরা করবে।
এই বিষয়ে ইসরোর বৈজ্ঞানিক বিএইচ দারুকেশা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, 'আমাদের আশা ছিল, তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি হতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এটি আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে আশ্চর্যজনকভাবে বেশি।'
ইসরোর বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে তাপমাত্রার এতটা ফারাক খুব কম ক্ষেত্রেই হয়। চন্দ্রযান-৩ এর প্রথম আবিষ্কারই খুব আকর্ষণীয় এবং আশ্চর্যজনক। ইসরোর ওই বিজ্ঞানীর কথায়, 'যখন আমরা পৃথিবীর অভ্যন্তরে দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার গভীরে যাই, তখন তাপমাত্রার ফারাক হয় দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে চাঁদের ক্ষেত্রে সেই ফারাক দাঁড়িয়েছে ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এই বিষয়টি যথেষ্ট আকর্ষণীয়।'
প্রসঙ্গত, চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার তারতম্য দক্ষিণ মেরুর চারপাশে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইসরোর চন্দ্রযান– ৩ এর সৌজন্যে এই প্রথমবার এই তথ্য বিজ্ঞানীদের কাছে এসেছে, যা রীতিমতো চমকে দিয়েছে সকলকেই।
কিন্তু এখানে প্রশ্ন একটাই যে, এই তাপমাত্রার তারতম্য ঠিক কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা এবং মহাকাশবিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী এই বিষয়ে বলেন, 'চাঁদের যে অঞ্চলে 'বিক্রম' অবতরণ করেছে, সেই 'শিবশক্তি' পয়েন্টকে ল্যান্ডিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল প্রধানত জলের উপস্থিতি অনুসন্ধানের জন্য। ভূপৃষ্ঠের মাত্র আট সেন্টিমিটার নীচে মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হওয়ার মানে, চাঁদের পৃষ্ঠের অল্প নীচে তরল অবস্থায় জল পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। বিশুদ্ধ জল হলে সেটা ওই তাপমাত্রায় জমে যেত। তাই এই বিষয়টি গবেষণার জন্য অনেকটাই সুবিধা যে দিতে চলেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।'
এদিকে ইসরো ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, রোভার 'প্রজ্ঞান'-এর আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার এবং লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ যন্ত্র দু'টির কাজই হল চাঁদের পৃষ্ঠের রাসায়নিক গঠন এবং চাঁদের মাটিতে ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, টিটেনিয়াম এবং লোহার উপস্থিতি এবং পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান করা।
তাই হাতে আর মাত্র ৬ দিন বেঁচে রয়েছে এইসব গবেষণা চালানোর। তারপরেই কিন্তু সূর্যাস্তের অন্ধকারে ঢেকে যাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু। তাই শেষের এই দিনগুলি যে মোক্ষম কাজ করতে চলেছে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন