সম্পদ দে : চন্দ্রযান-৩ এর অসাধারণ যাত্রা চাঁদে সফল অবতরণের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে। এটি ইসরোর জন্য একটি বিশাল কৃতিত্ব যা ৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে একটি চ্যালেঞ্জিং পথ অতিক্রম করে ২৩ আগস্ট সন্ধে ৬:০৪ মিনিটে চাঁদের বুকে পা রেখেছে। যে কাজ এতদিন পর্যন্ত পৃথিবীর আর কোনও দেশ করতে পারেনি, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে তা দেখিয়ে দিয়েছে ভারত।
তবে আসল প্রশ্ন হল, মহাকাশযানের গন্তব্য হিসাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকেই কেন পছন্দ করে নিল ভারত? ইসরোর উদ্দেশ্য কি কেবলমাত্র অন্যান্য দেশগুলির দ্বারা পরিচালিত পূর্ববর্তী চন্দ্র মিশন থেকে নিজেদেরকে আলাদা ভাবে তুলে ধরা, নাকি এর পেছনে আছে অন্য কোনও কারণ?
এত বছর ধরে ভারতের আগে কোনও দেশই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারেনি এর অত্যন্ত কঠিন অবস্থান এবং ল্যান্ডস্কেপের জন্য। কী এই অবস্থানটিকে উপযুক্তভাবে একটি শক্তিশালী ও কঠিন অবতরণ সাইট করে তোলে? উত্তরটি তিনটি কারণের মধ্যে রয়েছে।
প্রথমত- সূর্যের সীমিত অনুপ্রবেশের কারণে অনেকাংশ এলাকাই অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে ছায়া ফেলে, যার কারণে এখানে সঠিকভাবে কিছু দেখতে পাওয়া যায় না।
দ্বিতীয়ত- সূর্যালোকের অভাবের কারণে কুমেরুর চরম ঠাণ্ডা, যার তাপমাত্রা মাইনাস ৩০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত নেমে যায়।
তৃতীয়ত- এখানকার ল্যান্ডস্কেপ অত্যন্ত এবড়োখেবড়ো। গভীর গর্ত, উঁচু পাহাড় এবং ছায়ায় ঘেরা ফাটল দ্বারা ভর্তি, যা খুব কমই সূর্যের আলো অনুভব করেছে।
তবে এই চ্যালেঞ্জগুলি অপ্রতিরোধ্য নয়। কারণ, ইসরোর চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ রাজ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলি উন্মোচন করতে শুরু করেছে। এই উদ্যোগের পিছনের মূল কারণ হল– জল এবং বরফের সম্ভাব্য উপস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ করা, যা পৃথিবীর বাইরে যে কোনও ভবিষ্যতের মানুষের বাসস্থানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
এর আগেও ভারতই প্রথম দেশ, যে চাঁদে বরফ আকারে জলের খোঁজ করেছিল। যেহেতু চাঁদের দক্ষিণ মেরু সম্পূর্ণটাই আনকোরা অবস্থায় পড়ে আছে, তাই চন্দ্রযান-৩ এই এলাকায় আন্তরিকভাবে অনুসন্ধান করবে।
এর পাশাপাশি, বিজ্ঞানীরা চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ইতিহাসের গোপনীয়তা প্রকাশের সম্ভাবনা দেখে আগ্রহী। চন্দ্রে আগ্নেয়গিরি এবং প্রাচীন সমুদ্রের উৎসগুলি আগ্রহের বিষয়। চন্দ্রযান-৩ এর রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের পৃষ্ঠে জলের খোঁজ করার সাথে সাথে চন্দ্রে উল্কাবৃষ্টি এবং গ্রহাণুর প্রভাবগুলির উপরেও গবেষণা করবে। যেহেতু চাঁদে পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল নেই, তাই অনেক সময় ছোটখাটো উল্কাপিণ্ড বায়ুমণ্ডলে ধ্বংস না হতে পেরে ছিটকে এসে পড়ে চাঁদের বুকে। সেই সম্ভাব্য আঘাত থেকেও সামলে চলতে হবে প্রজ্ঞানকে।
কুমেরুতে অবতরণে চন্দ্রযান-৩ এর বিজয় ইসরোর অটল সংকল্প এবং অজানাকে খুঁজে বের করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি সকলের সামনে তুলে ধরে। চন্দ্রযান-৩ এর সফলতার পরে বর্তমানে মানুষের মুখে মুখে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কথা ভীষণ প্রচলিত হয়েছে, 'আজ চাঁদের থেকেও আমাদের দেশ বেশি উজ্জ্বল লাগছে'।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন