সমকালীন প্রতিবেদন : ভারতের মতো একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশে যেখানে দরিদ্র পরিবারের একজন মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়, ধারদেনা করতে হয়, সেখানে সেই দেশেই আর এমন একশ্রেণীর মানুষ আছেন, যারা নিজেদের ছেলেমেয়ের বিয়েতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন।
তাই ভারতের মতো একটি দেশে এই ধরনের বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে লাগামছাড়া খরচ করা বাহুল্য, অপব্যয় ছাড়া আর কিছু নয়, এমনই মনে করেন পাঞ্জাবের কংগ্রেস সাংসদ যশবীর সিং গিল। আর তাই এইধরণের সামাজিক অনুষ্ঠানে খরচে লাগাম টানতে লোকসভায় বিল এনেছেন তিনি।
কি আছে এই বিলে ? যতদূর জানা যাচ্ছে, ওই বিলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এক শ্রেণীর ধনী বাবা মায়েরা নিজেদের বৈভব দেখানোর জন্য বিস্তর অপচয় করেন। আবার 'কন্যাদায়গ্রস্ত' বহু বাবা-মাকে মেয়ের বিয়ে দিতে সর্বস্ব খোয়াতে হয়।
বছর তিনেক আগে পাঞ্জাবের খদুর সাহিব লোকসভা কেন্দ্রের ওই সাংসদের প্রস্তাব আকারে আনা এই বিল নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই বিলের আসল উদ্দেশ্য বিয়েবাড়িতে শুধু খরচ কমানো নয়, অপচয় রোধ করা।
ওই সাংসদের প্রস্তাব— কন্যা সন্তানের বিয়ে দিতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন অনেক গরিব বাবা মা। তাই আইন করে এই বিলাসিতা এবং অপচয় রোখা দরকার। যে পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয় বিয়েতে, সেই টাকা দুঃস্থ মানুষদের সেবার কাজে লাগানোর কথাও বলা হয়েছে এই বিলে।
যশবীর গিলের যুক্তি, তিনি বাস্তবে এমন অনেকের কথা শুনেছেন, যাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে জমিবাড়ি বেচে দিতে হয়েছে। এছাড়াও, বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। এই অবস্থা কোনও সভ্য দেশে কাঙ্খিত নয়। তা বন্ধ করতেই হবে। এটা এক ধরনের সামন্ততান্ত্রিক ঝোঁক। অথচ আমরা বহুদিন আগেই সামন্ততন্ত্রকে বিদায় জানিয়েছি। কিন্তু সামন্ততন্ত্রের বীজ এখনও বহন করে চলেছি।
‘বিশেষ উপলক্ষে অপব্যয় প্রতিরোধ’ নামক প্রস্তাবিত বিলটি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং বিলটি পাশ হলে কন্যাভ্রুণ হত্যার মতো মর্মান্তিক অপরাধও বন্ধ হবে বলে মনে করেন সাংসদ যশবীর সিং গিল।
তাঁর আনা এই বিলে প্রস্তাব আকারে বলা হয়েছে— বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা ২৫০০ টাকার বেশি নগদ কিংবা উপহার দিতে পারবেন না। ১০০ জনের বেশি অতিথিকে নিমন্ত্রণও করা যাবে না। ১০ টির বেশি পদ খাওয়ানো যাবে না। বরযাত্রীর সংখ্যা ৫০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
যে দেশে এখনও বহু মানুষকে না খেয়ে ঘুমোতে হয়, সেই দেশে বিয়েবাড়ির মতো সামাজিক অনুষ্ঠানে অঢেল খাদ্যের আয়োজন শুধু বিলাসিতা নয়, অপব্যবহার। তা আটকাতে না পারলে বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই সেই টাকা দিয়ে অনাহারক্লিষ্ট মানুষের খাদ্যের আয়োজন যদি করা যায়, তাহলে তা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এমনই একটি মহৎ উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠানবাড়ির খরচ সবার জন্য একটি নির্ধারিত সীমায় বেঁধে দেওয়ার জন্য সাংসদের আনা এই প্রস্তাব আইনে পরিনত হোক, এমনটা চান সমাজ সচেতন নাগরিকেরা। কিন্তু ভারতবর্ষের মতো এত বড় একটি দেশে এমন আইন পাস করিয়ে রীতি বদল করা বাস্তবে কি সম্ভব ? প্রশ্ন সেখানেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন