Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩

সমুদ্রে স্নান করতে গেলে ‌সাবধান, বিষাক্ত সামুদ্রিক সাপের সন্ধান মিললো দীঘায়

Poisonous-snake-in-Digha

সম্পদ দে : পশ্চিমবঙ্গের দীঘার জলে এমন একটি বিষাক্ত সামুদ্রিক সাপ লুকিয়ে আছে, যা চিকিৎসক এবং সর্প বিশেষজ্ঞদের গভীরভাবে চিন্তায় ফেলেছে। বৈজ্ঞানিকভাবে পেলামিস প্লাটুরাস নামে পরিচিত সাপটিকে এর স্বতন্ত্র রঙের কারণে 'ইয়েলো বেলিড সি স্নেক' নামেও মানুষজন চেনেন।

মাত্র আড়াই থেকে তিন ফুটের মধ্যে পরিমাপ থাকলেও তা দেখে একে কোন মতেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এই সামুদ্রিক সাপের একটি এমন মারাত্মক বিষ রয়েছে, যার একটি কামড়ে শরীরকে দ্রুত পঙ্গু করে দিতে পারে। বিষটি 'মায়োটক্সিক ভেনম' নামে পরিচিত, যা শরীরে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই পেশীকে অকেজো করে দেয় এবং মায়োগ্লোবিনুরিয়া এর দিকে পরিচালিত করে। 

শেষ পর্যন্ত রোগীর কিডনি এবং হার্ট ফেইলিওর করে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হল যে, সাপের কামড়ের জন্য প্রচলিত প্রতিষেধক 'অ্যান্টি স্নেক ভেনম' বা যাকে এভিএস বলা হয়, তা এই বিশেষ সাপের কামড়ের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অকার্যকর যা ডাক্তারদের চিন্তা আরও বহু গুনে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাঁকুড়ার একদল পর্যটকদের ক্যামেরায় ধরা এই ঘাতক সাপের ভিডিও দেখার পরে, ডাক্তারেরা পর্যটকদের বিপদ এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত সর্প বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডঃ হিম্মতরাও বাভস্কর নিশ্চিত করেছেন যে, এই সাপের কামড়ে এভিএস চিকিৎসার কোনও কার্যকারিতা নেই। যার ফলে চিকিৎসকদের বেশিরভাগই লক্ষণভিত্তিক পদ্ধতির উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করতে হবে।

ইয়েলো বেলিড সি স্নেক মূলত আরব সাগরের বাসিন্দা। তবে মাঝে মাঝে বঙ্গোপসাগরে দেখা যায়।  পশ্চিমবঙ্গে কালাচ, কেউট, গোখরো এবং চন্দ্রবোড়া সহ বিষাক্ত সাপের প্রধান চারটি উপজাতি পাওয়া গেলেও এই সামুদ্রিক সাপ বিষাক্ততায় তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। 

: ‌এই খবরের ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন :

এটি ভয়ঙ্কর কালাচ এবং কৃষ্ণ কালাচের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। মুখ অনেকটা হাঁসের মতো এবং লেজের শেষ অংশটা নৌকোর দাঁরের মতো। পেটের নিচের অংশটা হলুদ রঙের বলেই এর নাম ইয়েলো বেলিড রাখা হয়েছে।

আন্নামালাই ইউনিভার্সিটির গবেষক, যিনি গাঙ্গেয় উপকূলে সামুদ্রিক সাপের অধ্যয়ন করছেন, প্রকাশ করেছেন যে ভারতে প্রায় ২৪ ধরনের সামুদ্রিক সাপ রয়েছে, যার মধ্যে ইয়েলো বেলিড হল সবচেয়ে বিষাক্ত। এই সাপের বিষ সাধারণ অ্যান্টি স্নেক ভেনাম এ অন্তর্ভুক্ত নয়, যা এর চিকিৎসায় আরও জটিলতার সৃষ্টি করে। ভারতে পাওয়া অন্যান্য বিষধর সাপের ক্ষেত্রে ১০০ মিলিলিটার অ্যান্টি স্নেক ভেনাম দেড় থেকে দু'ঘণ্টার মধ্যে দিতে পারলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। তবে ইয়েলো বেলিড এর ক্ষেত্রে এর কোনটাই কাজ করে না।

যদিও শঙ্খচুর এবং শাখামুটি বিষাক্ত হওয়া সত্বেও সেগুলি মানুষের ক্ষতি করে, এমন খবর সচরাচর পাওয়া যায় না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ইয়েলো বেলিড এর কামড়ে অনেক সম‌য়েই প্রচুর মৎস্যজীবীর প্রাণ গেছে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা রেকর্ড করা হয়নি। 

কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষজ্ঞরা দীঘা অঞ্চলের সমুদ্র সৈকতগামী পর্যটকদের এবং মৎস্যজীবীদের এই প্রাণঘাতী সামুদ্রিক সাপের সম্ভাব্য উপস্থিতি থেকে সতর্ক থাকার জন্য বার্তা পাঠিয়েছেন। দীঘার মতো এলাকায় এই বিষাক্ত সাপের আবিষ্কার এই বিপজ্জনক প্রজাতির ওপর গবেষকদের আরও ভাবিয়ে তুলছে।

দীঘা উপকূলে এই সাপের দেখা পাওয়ার সাথে সাথেই প্রশাসনের এবং চিকিৎসকদের তরফ থেকে লোকজনকে সজাগ থাকার এবং সাপের কামড়ের সন্দেহ হলে অবিলম্বে চিকিৎসার পরামর্শ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এখন জানার চেষ্টা করছেন, আরব সাগরের এই বিষাক্ত সাপ এত দূর দীঘা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত কিভাবে চলে এলো।






‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন