সম্পদ দে : মহাজাগতিক রহস্য উন্মোচনের জন্য ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো ইতিমধ্যেই চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে। আর বৈজ্ঞানিকদের আশা, মাত্র দিন কয়েকের মধ্যে সেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণও করবে। আর এই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে, ইসরো তার আরও একটি আসন্ন মিশন, আদিত্য এল–1 কে সূর্যের কাছে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে।
আদিত্য এল–1 সমগ্র ভারতীয়দের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত করবে। কারণ, এটি আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র সূর্যকে অধ্যয়ন করার জন্য তার যাত্রা শুরু করতে চলেছে। এমনকি মহাকাশযানটির নামকরণও সংস্কৃত ভাষায় সূর্যেরই আরেকটি নাম 'আদিত্য' দিয়ে করা হয়েছে।
বেঙ্গালুরুতে ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টারের সীমানায় অবস্থিত আদিত্য এল–1 মহাকাশযানটি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে তার গুরুত্বপূর্ণ উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় রয়েছে। এই অসাধারণ যাত্রার জন্য প্রত্যাশিত সময় আগস্টের শেষের দিকে বা সেপ্টেম্বরের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, যা মহাকাশ উৎসাহী এবং গবেষকদেরকে ঘড়ির কাঁটায় চোখ রাখতে বাধ্য করেছে।
আশা করা হচ্ছে চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপনের সময় যেমন হাজার হাজার মানুষ এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে এসেছিলেন, এইবার আদিত্য এল–1 মহাকাশযানটি উৎক্ষেপনের সময় তার থেকেও বেশি ভিড় হবে। মহাকাশের বিশাল বিস্তৃতির মধ্যে আদিত্য এল–1 পৃথিবী থেকে আনুমানিক ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সূর্যের ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট–1 বা যাকে সংক্ষেপে এল–1 বলা হয়, তার চারপাশে একটি অনন্য কক্ষপথে অবস্থান নেবে।
এই স্থানটি একটি কৌশলগত অবস্থান, যা একটি ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট নামে পরিচিত। এই স্থানটি একটি অতি সূক্ষ্ম ভারসাম্য সরবরাহ করে, যেখানে মহাকাশযানকে অপেক্ষাকৃত স্থির থাকার জন্য মহাকাশযানের মধ্যকার মহাকর্ষীয় বলগুলি অনুমতি দেয়। মহাকাশযানটিকে এই পজিশনে এনে স্থাপন করা গেলে সূর্যের উপর সুন্দরভাবে গবেষণা করার সাথে সাথে মহাকাশযানের জ্বালানি খরচও অনেকটা কমিয়ে আনা যাবে। যার কারণে এই মিশনের বাজেটের উপরে কম চাপ পড়বে।
: ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন :
খবর অনুযায়ী, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রে ভরপুর আদিত্য এল–1 সাতটি পেলোড বহন করেবে, যার প্রতিটি সূর্যের বিভিন্ন দিক পরীক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণগুলি সূর্যের আলো, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং বাইরের স্তরগুলিকে ঘিরে রাখবে, যা মহাকাশ আবহাওয়ার উপর সৌর কার্যকলাপের প্রভাবের উপর আলোকপাত করবে। সূর্যের বায়ুমণ্ডলের গতিশীল বৈশিষ্ট্যগুলি বোঝার উপর ফোকাস করার সাথে মিশনের লক্ষ্য আংশিকভাবে আয়নিত প্লাজমার মধ্যে ভর, তাপমাত্রা এবং ঘনত্বের ওঠানামা বিশ্লেষণ করা যা সূর্যকে আবৃত করে রেখেছে।
এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাইরে আদিত্য এল– 1 এর যাত্রা সূর্যের অন্তর্নিহিত চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলির একটি গভীরতা বোঝার দিকেও নজর দেবে। এই অভিযানের মাধ্যমে কিভাবে সৌর প্রক্রিয়াগুলি চালিত হয় এবং আমাদের সৌরজগতের গতিশীলতায় সূর্যের প্রভাব এবং অবদান কতটা, তা উন্মোচন করতে পারবে।
এই অসামান্য উদ্যোগের জন্য প্রত্যাশা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দেশের বৈজ্ঞানিক মহল এবং মহাকাশ উৎসাহীরা একইভাবে আদিত্য এল–1 এর মিশনের উদ্ঘাটনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আসন্ন এই মিশনটি ভারতকে মহাকাশ অনুসন্ধান এবং গবেষণার ক্ষেত্রে নিজেকে আরও শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করছে।
ইসরোর কথায়, আদিত্য এল–1 এমন একটি যাত্রা হতে চলেছে, যা কেবল সূর্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান প্রসারিত করবে না, বরং সূর্যের মতোই আমাদের ভেতরে মহাকাশ সম্পর্কে আরও কৌতূহলের আগুন তৈরি করবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন