সম্পদ দে : গ্রীষ্মের রাতগুলোতে যখন ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসবে, তখন এই আকাশ ভরে উঠবে তারার আলোকে আলিঙ্গন করে। আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের উৎসাহী থেকে শুরু করে স্টারগ্যাজাররা, এই বছর বহু প্রত্যাশিত পার্সিড উল্কা বৃষ্টির এই নিঃসর্গ দৃশ্য দেখার জন্যই অপেক্ষায় রয়েছেন৷ এই বার্ষিক স্বর্গীয় দৃশ্যটি ১১ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত আমাদেরকে এক আলাদা জগতে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুরু হয়ে।
এই উল্কা বৃষ্টির নাম হলো, পার্সিড উল্কা বৃষ্টি। সুইফ্ট-টার্টল ধূমকেতুর ফেলে যাওয়া ধ্বংসাবশেষগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গা ঘেঁষে যাওয়ার কারণে এই অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এই কণাগুলি যখন আমাদের বায়ুমণ্ডলে ভিষন গতিতে প্রবেশ করে, তখন তারা জ্বলে উঠে এক চকচকে রেখা তৈরি করে, যাকে আমরা উল্কা বা 'শুটিং স্টার' বলি। এই বছরের ইভেন্টটি আর ও সুন্দর হওয়ার কথা। কারণ, এবছর প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১০০টি উল্কা দেখতে পাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।
এই নৈসর্গিক দৃশ্য সর্বোত্তম দেখার জন্য বিশেষজ্ঞরা আলো-দূষিত এলাকা থেকে বেরিয়ে অন্ধকার, খোলা জায়গা খোঁজার পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রকৃতির এই অ্যাম্ফিথিয়েটারে মখমল আকাশের নীচে হেলান দিয়ে বসে জীবনের অন্যতম সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য এই গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় ফাঁকা সময় তো বের করতেই হবে। যারা এই দৃশ্যের প্রত্যাশায় অপেক্ষা করে থাকবেন, পরিষ্কার আকাশ এবং ধৈর্য নিঃসন্দেহে তাদের পুরস্কৃত করবে।
উল্কাগুলি যখন আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তাদের লেজগুলি আলোর ক্ষণস্থায়ী আর্ক তৈরি করে, যা আমাদের মহাবিশ্বের বিশালতা এবং বিস্ময়কে মনে করিয়ে দেয়। পার্সিড মিটিওর শাওয়ারের কাছে রয়েছে সংস্কৃতি এবং প্রজন্ম জুড়ে মানুষকে একত্রিত করার এক অনন্য ক্ষমতা, যা সহস্র বছর ধরে চলে আসা মহাজাগতিক এই দৃশ্য দেখার জন্য তাদের একত্রিত করে।
এই বছরের পার্সিড উল্কা ঝর্ণাটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলতে আমাদের চাঁদমামারও হাত আছে। উল্কা বৃষ্টির এই কয়েকদিন চাঁদের উজ্জ্বলতা তুলনামূলক সামান্য কম থাকবে। যার কারণে উল্কার উজ্জ্বলতা বাধা প্রাপ্ত না হওয়ায় পৃথিবী থেকে তা আরও বেশি স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।
২০১৬ সালে এই উল্কাপাতের পরিমাণ সব থেকে বেশি ছিল। তারপরে সেই রকম দৃশ্য আবারও এই ২০২৩ সালে দেখা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন। ফলে আপনি একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী বা এক কৌতূহলী শিশু– যাই হোন না কেন, ২০২৩ সালের পার্সিড উল্কা বৃষ্টি আপনাকে সম্পূর্ণ চমকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
সুতরাং, মহাজাগতিক এই স্বর্গীয় থিয়েটার দ্বারা মোহিত হওয়ার জন্য এখনই প্রস্তুত হন। পার্সিড উল্কা বৃষ্টি আবার আমাদের আকাশকে আলিঙ্গন করার সাথে সাথে আমাদের পার্থিব সীমানার বাইরে থাকা সৌন্দর্য এবং রহস্যে আশ্চর্য হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ সময় পেয়ে যাবো আমরা। এ যেন এক মনে করিয়ে দেওয়ার দৌড়, যে তাড়াহুড়ো এবং কোলাহলে ভরা পৃথিবীতে আজও মাথা তুলে তাকালে এক প্রশান্তি এবং বিস্ময়ের মুহূর্তের সাক্ষী থাকা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন