সমকালীন প্রতিবেদন : অবশেষে ভারত পারলো। ইতিহাস গড়ল ভারত। ৫ টা বেজে ৪৪ মিনিট থেকে অবতরণ শুরু হয়েছিল। ইসরোর ছবি দেখাচ্ছিল যে প্রতি মুহূর্তে আল্টিচুড কমে আসছে। শেষে এসে পৌঁছে গেল ল্যান্ডার বিক্রম। প্রথম দুটো ব্যর্থ হলেও এবার ১৪০ কোটি ভারতবাসীর শুভ কামনা নিয়ে চাঁদের অজানা, অচেনা দক্ষিণ মেরুতে পালকের মতো হালকাভাবে উড়তে উড়তে চাঁদের মাটি স্পর্শ করলো আমাদের আদরের চন্দ্রযান।
আদরের চন্দ্রযান ৩-কে নিয়ে কল্পনায় মগ্ন ভারতবাসী। চাঁদকে নিয়ে বরাবরই কল্পনাবিলাসী মানুষ। কারও কাছে সে প্রিয়তমা, কারও কাছে চাঁদমামা। আর সেই চাঁদই এবার হাতের মুঠোয় এসে গেলো। সৌজন্যে ইসরোর চন্দ্রযান-৩। শুধু চাঁদের মাটি স্পর্শই করলো না, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিলো। পাঠানো শুরু করে দিল ছবি।
গত ৪০ দিন ধরে দূরন্ত গতি নিয়ে ছুটে গিয়েছিল মহাশূন্যের দিকে। গত ৪০ দিন ধরে পৃথিবী এবং চাঁদের কক্ষপথ মিলিয়ে মোট ১২টি কক্ষপথ পার করেছে চন্দ্রযান-৩। এবার সে চাঁদের একদম বন্ধু হয়ে গেল। দু'চোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে আমরা সবাই তাকিয়ে দেখলাম সেই অপূর্ব সুন্দর বন্ধুত্ব।
চাঁদের বাড়ির উঠোনে চুম্বন করলো চন্দ্রযান-৩। তার ল্যান্ডার বিক্রম উঁকি দিচ্ছে সেই বাড়ির জানলা দিয়ে। তাকিয়ে দেখছে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের রঙ ও রূপ। বিশ্বের কাছে ভারত একদিকে যেমন চতুর্থ হলো, আবার অপর দিকে ভারত হলো প্রথম দেশ, যারা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করাতে পারলো সফলভাবে।
শেষ ১৭ মিনিটের তীব্র স্নায়ুর লড়াইয়ে জিতে গেল ইসরোর বিজ্ঞানীরা। স্নায়ুর লড়াই ছিল ইসরো তথা গোটা দেশের মানুষের কাছে। দেশে থাকতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন পড়ে রয়েছে চাঁদে। সেই সুদূর জোহানেসবার্গে বসেই চন্দ্রযান ৩-এর লাইভ স্ট্রিমিংয়ের চোখ রাখলেন তিনি। হেসে উঠেন আনন্দে। হাতে তাঁর ভারতের জাতীয় পতাকা। হাত নাড়িয়ে অভিবাদন জানালেন ইসরোর বিজ্ঞানীদের। অগ্নিপরীক্ষা শুধু ইসরোর নয়, তাঁরও।
: ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন :
চন্দ্রযান-৩ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ২০০ বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল তুললো আজ চন্দ্রযান-৩। সঙ্গে অবশ্যই রয়েছে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের প্রত্যাশা। আমরা উদ্বেলিত। পৃথিবীর আর কোনও দেশ যা পারে নি, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি স্পর্শ করতে, তা করে দেখলো ভারত।
ইসরোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হলে জোহানেসবার্গ থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আনন্দে আমরা উদ্বেলিত। এ জয় নতুন ভারতের জয়।' গোটা ইসরো পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে এদিন প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে বলেন, চন্দ্রমামা আর এখন দূরে নয়। আগামীদিনে ভারত সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহেও অভিযান করবে।
সদ্য রাশিয়ার লুনা-২৫ মুখ থুবড়ে পড়েছে চাঁদের মাটিতে। একদম অল্প সময়ে ভারতের আগে দক্ষিণ মেরু স্পর্শ করার বাসনা নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিল পুতিনের দেশ। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে লুনা। আর ভারত 'স্লো বাট স্টাডি' এই থিওরির উপর ভরসা করে সাফল্য পেয়েছে।
তাই ভারতের এই সাফল্যে রাশিয়া কতটা খুশি বলা যাচ্ছে না। কিন্তু বাকি বিশ্বের কাছ থেকে ইতিমধ্যে শুভেচ্ছাবার্তা আসা শুরু করেছে। নাসা প্রথম থেকেই নানাভাবে এই অভিযানে ভারতকে সাহায্য করেছে। এসেছে আমেরিকার শুভেচ্ছাবার্তা। ভারতবাসী হিসাবে আজ বড়ো আনন্দের দিন, গৌরবের দিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন