সম্পদ দে : একটি সাহসী পদক্ষেপে, ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ইসরো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামতে চলেছে। অন্য কোনো দেশ আগে যা অর্জন করতে পারেনি তা সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিচ্ছে ইসরো। নাসার সার্ভেয়ার-৭ ১৯৬৮ সালে এই অধরা লক্ষ্যের সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল, কিন্তু এখন ইসরো এই রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস তৈরি করতে চলেছে৷
২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ এর সাথে ইসরো এই প্রচেষ্টা শুরু করেছিল, যেখানে ৯০ শতাংশ সফল মিশন সত্ত্বেও, ল্যান্ডার বিক্রমকে একটি দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরী ডুবে গিয়েছিল। তবে, এটিকে সম্পূর্ণ ব্যর্থতা হিসেবে দেখার পরিবর্তে ইসরো এই মিশন থেকে অমূল্য অভিজ্ঞতা এবং মূল্যবান তথ্য অর্জন করে বর্তমান মিশনের সফলতার জন্য তা কাজে লাগিয়েছে।
চাঁদের অনাবিষ্কৃত অঞ্চলে চোখ রেখে চন্দ্রযান-৩ একটি ভিন্ন পদ্ধতি নিয়েছে। অতীতের চ্যালেঞ্জগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে মহাকাশযানটি চাঁদের ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে অবতরণ করবে, যা পূর্ববর্তী দুর্ঘটনা এড়াতে একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। ঐতিহাসিকভাবে সমস্ত চন্দ্র অবতরণ নিরক্ষীয় অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু এখন নাসার পরে ইসরো দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি চলে এসেছে।
এই মিশনের তাৎপর্য জাতীয় গর্বের বাইরেও চাঁদ বাসযোগ্য কিনা তা খুঁজে বের করার একটি অনুসন্ধান। রোবোটিক রোভার প্রজ্ঞান, মহাকাশযানে চড়ে অন্বেষণ এবং তথ্য সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা ভারতের চন্দ্র গবেষণার জন্য নতুন দরজা খুলে দিতে পারে।
১৪ জুলাই যাত্রা শুরু হয়েছিল। ইসরো ২৩ আগস্টের মধ্যে চাঁদে পৌঁছানোর জন্য বদ্ধপরিকর। পয়লা আগস্ট চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাধ্যাকর্ষণে প্রবেশ করে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক তৈরি করেছে। ৫ আগস্টের মধ্যে মহাকাশযানটি চন্দ্রের কক্ষপথে প্রবেশ করবে, যা একটি ঐতিহাসিক চন্দ্র অবতরণের পথ তৈরি করবে।
চন্দ্রযান-৩ এর জন্য ইসরোর দৃষ্টিভঙ্গি বেশ উচ্চাকাঙ্খী। কারণ ইসরো ভারতকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছে দেওয়া প্রথম দেশই বানাবে না, বরং বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের সীমানাও ঠেলে দেবে৷ এই কৃতিত্ব ভারতকে সোভিয়েত রাশিয়া, চীন এবং মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসার পাশাপাশি অগ্রগামী মহাকাশ গবেষণা দেশের মানচিত্রে নিয়ে যাবে।
ঘড়ির কাঁটা যতই ঘুরছে, ইসরোর বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা ততটাই সতর্ক ও আশাবাদী, নিরাপদ অবতরণ নিশ্চিত করতে এবং চন্দ্রযান-৩ কে একটি দুর্দান্ত সাফল্যে পরিণত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। ভারতকে এই মহাজাগতিক উচ্চতা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরোর প্রতিটি বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীদের ওপর প্রতিটি ভারতবাসী অত্যন্ত গর্বিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন