সমকালীন প্রতিবেদন : সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সরকারি রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, শুধু শিক্ষার্থীর অভাবে এই রাজ্যে অন্তত ৮ হাজার স্কুল উঠে যাওয়ার মুখে। বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমেই চলেছে। অপর দিকে বিস্তর খরচ হওয়া সত্ত্বেও বেসরকারি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
এর পিছনে একাধিক কারণ হয়তো আছে, কিন্তু ঘটনাটি বাস্তব। পরিসংখ্যানটি খুবই মারাত্মক। দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে এমন ২২৬টি স্কুল আছে, যেখানে একজনও শিক্ষার্থী নেই। অর্থাৎ স্কুলঘর আছে, বেঞ্চ আছে, সমস্ত পরিকাঠামো আছে, যোগ্য শিক্ষকেরা আছেন, নেই শুধু পড়ুয়া। যে কোনও রাজ্যের বা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সামনে এটা একটা অশুভ ইঙ্গিত।
বিষয়টি এখানেই শেষ নয়, সরকারি পরিসংখ্যানে প্রকাশ, রাজ্যের ৮২০৭ টি স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০ জনের নীচে। অথচ সেখানে হয়তো যথেষ্ট পরিমাণে শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। তাঁরা বাধ্য হয়ে স্কুলে গিয়ে না পড়িয়ে বাড়ি ফিরে আসছেন। কোনও শিক্ষকই এটা চান না। কিন্তু তাঁরা অসহায়।
বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা অন্য কারণেই এখন তলানিতে। ২০১১ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ক্রমাগত দুর্নীতির জালে জড়িয়ে পড়েছেন রাজ্যের তাবর নেতা-মন্ত্রীরা। এখন 'টাকা দিয়ে চাকরি কেনা' কথাটা যেন প্রবাদবাক্যে পরিণত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব সহ অনেকেই এখন দুর্নীতির দায়ে জেলে। আন্দোলনকারী যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা রোদ-শীত-বৃষ্টির মধ্যে পথে বসে আছেন।
যখন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার এই নগ্ন দশা রাজ্যের মান-সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করছে, ঠিক সেই সময় প্রকাশ পেলো এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান। ছাত্রছাত্রীহীন এমন স্কুলের তালিকায় সামনের দিকেই আছে কোলকাতা শহর। বেসরকারি স্কুলের প্রতি মোহ যেমন এর একটা কারণ, তেমনি শহর এবং শহরতলি অঞ্চলে জনসংখ্যা কমে যাওয়াও এর একটা বড় কারণ।
সরকারি স্কুল বিল্ডিং এ বেসরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে একটা যৌথ উদ্যোগের কথা কেউ কেউ ভাবছেন। কিন্তু সেটা বাস্তবে হবে বলে মনে হয় না। সবটা মিলিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা। সুতরাং এই মুহূর্তে সরকারি শিক্ষানীতি নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু না করলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে বলেই শিক্ষাবিদরা মনে করছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন