Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩

মানসিক চাপ কমাতে গাছই মানুষের অন্যতম বন্ধু

 ‌

Trees-are-one-of-man-best-friends

সমকালীন প্রতিবেদন : বর্তমান ক্লান্ত ও দ্রুত-গতির বিশ্বে যেখানে চাপ এবং মানসিক ক্লান্তি বেশিরভাগ মানুষের কাছে একটি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে, সেখানেই মনকে পুনরুজ্জীবিত করার এবং আত্মাকে শান্ত করার জন্য একটি প্রাচীন সমাধান আবির্ভূত হয়েছে। নম্র সবুজ উদ্ভিদ। যদিও এটি সুপরিচিত যে গাছপালা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সবথেকে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে, অক্সিজেন তৈরি করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে।

সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক একটি গবেষণা মানুষ এবং উদ্ভিদ রাজ্যের মধ্যে এক গভীর সংযোগ খুঁজে বের করেছে। গাছপালা শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক সুস্থতায় অবদান রাখে না, তারা বিষণ্নতা দূর করা, মানসিক চাপ উপশম করা এবং মনকে চাঙ্গা করার মতো অসাধারণ ক্ষমতারও অধিকারী।

অসংখ্য অধ্যয়ন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর উদ্ভিদের অসাধারণ প্রভাবকে আলোকিত করেছে। কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমাতে তাদের জুরি মেলা ভার। মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা বিশাল বৃক্ষ হোক বা আমাদের বাড়িঘরকে সাজানো ক্ষুদে সৌন্দর্য, আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে সবাই।  উদ্ভিদের উপস্থিতিতে হতাশা, উদ্বেগ এবং মেজাজের ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে, যা শরীর এবং মন– উভয়ের মধ্যেই মানসিক শান্তি আর উৎসাহের অনুভূতিকে বাড়িয়ে তোলে।

এই কথাগুলি একটিও মিথ্যা নয়। এই প্রতিটি দাবি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। হর্টিকালচারাল থেরাপি এমন একটি অভ্যাস, যা বাগানের মাধ্যমে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ বা গাছপালাগুলির সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে জড়িত। এটি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা PTSD এর উপসর্গগুলিকে উপশম করতে এবং জীবনধারা পরিবর্তন করতেও সক্ষম।

বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন যে, কর্মক্ষেত্রে একজনের ডেস্কে রাখা একটি ছোট গাছও মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। মানসিক স্বচ্ছতা এবং তৃপ্তির অনুভূতি বাড়াতে পারে।  

: ‌এই সংক্রান্ত ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন :

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, উদ্ভিদের উপস্থিতি মানসিক সংযোগ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত তীক্ষ্ণ করে।  কিন্তু এই অসাধারণ প্রভাবের ভেতরকার কারণটা কী? উদ্ভিদরা যেহেতু পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে, সেজন্যই আমাদের চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার এবং সতেজ থাকে।

ব্রিটেনের হেলথ অ্যান্ড সেফটি এক্সিকিউটিভ বা HSE দ্বারা প্রদত্ত নির্দেশিকা অনুসারে, অফিসে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কখনই ১০০০ পিপিএম এর বেশি হওয়া উচিত নয়, কারণ, উচ্চ পিপিএম মাত্রা মাথাব্যথা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং প্রতিবন্ধী সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ হতে পারে। আশ্চর্যজনকভাবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাড়ির গাছপালা এক ঘন্টারও কম সময়ে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ২০০০ পিপিএম থেকে মাত্র ৪৮০ পিপিএমে কমাতে পারে।

কিছু উদ্ভিদের জাত, যেমন ব্লু স্টার ফার্ন, উইপিং ফিগস, স্পাইডার প্ল্যান্ট এবং অ্যান্থুরিয়াম কার্যকরীভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, স্বাস্থ্যকর এবং আরও অনুকূল পরিবেশের প্রতি অবদান রাখে।

ইতিহাস ঘাটলেই খুঁজে পাওয়া যায়, গাছ মানব সমাজের হৃদয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভরণ-পোষণ এবং ঔষধির উদ্দেশ্যে গাছের উপর একটা সময় নির্ভর করতেন। তবে সময়ের সাথে সাথে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তিত হয়েছে। আজ আমরা আর গাছের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল নই। বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে সবুজ গাছপালা আরও হ্রাস পাবে, যার ফলে মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে।

মানুষ এবং সবুজ উদ্ভিদের মধ্যে অমূল্য এই বন্ধনকে চিনতে শেখা এবং মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছপালা আমাদের মনকে পুনরুজ্জীবিত করার, আমাদের জীবনকে সতেজতা প্রদান করার এবং সামগ্রিক সুস্থতার প্রচার করার একটি অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী। তাই আমাদের সকলের উচিত চারপাশে সবুজের উপস্থিতি সংরক্ষণ করা। কারণ, এটি মানুষের এবং গোটা প্রাণী জগতের এমন একটি বন্ধু, যে কোনদিন কোন বায়না ছাড়াই আমাদের লালন-পালন করে আসছে সেই প্রাচীন যুগ থেকেই।





‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন