সমকালীন প্রতিবেদন : স্কুলে পড়া করে না গেলে কান ধরে উঠবস করতে হয়নি বা খাতায় ১০০ বার ক্ষমাপ্রার্থনা লিখতে হয়নি, এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া দায়। বাড়ির পড়া না করে গেলে মাস্টারমশাইয়ের রাগ তো সহ্য করতেই হবে। কিন্তু কথা না রাখলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে যে বিধায়ককেও শাস্তি পেতে হয়, এমনটা দেখেছেন কোথাও?
খানিক এমন ঘটনাই ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের কালুত্বক গ্রামে। গ্রামের স্কুল মোড়ের সামনে মূল সংযোগকারী রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে বেহাল অবস্থায়। মাটির ভাঙাচোরা কাঁচা রাস্তা, আর বর্ষাকালে তো ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার কথা ভাবাও একটি দুঃস্বপ্নের মতো। বহু বছর ধরে এই এক হাঁটু সমান কাদা পেরিয়েই সমস্ত জায়গায় যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসীদের।
গ্রামবাসীদের তরফ থেকে বারবার পঞ্চায়েতে এবং বিধায়কের কাছে আবেদন করা সত্ত্বেও প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে বারবার গ্রামবাসীদের তরফ থেকে বিধায়ককে রাস্তা তৈরি করার হোমওয়ার্ক দেওয়া হলেও, সেই দিকে নজর দেননি বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী।
শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির ৯ নম্বর আসনের প্রার্থী আব্দুর রউফের সমর্থনে ভোট চাইতে বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী এলাকায় পৌঁছতেই এলাকাবাসীরা তাঁকে ঘিরে ধরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। যেমন পড়া না করলে মাস্টারমশাই ছাত্রদেরকে শাস্তি দেন, ঠিক তেমনি বিধায়কেও গ্রামবাসীদের দেওয়া শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।
দক্ষিণবঙ্গে ইতিমধ্যেই বর্ষা প্রবেশ করে যাওয়ার কারণে ভাতারের সেই রাস্তারও এখন করুণ দশা। আর সেই রাস্তাতেই প্রায় এক হাঁটু কাদায় বিধায়ককে হাঁটিয়ে ছেড়েছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের মানুষদের এমন শাস্তির মুখোমুখি পরে বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর তো রীতিমতো 'ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি' অবস্থা।
শেষ পর্যন্ত একপ্রকার পায়ে পড়েই গ্রামবাসীদের শাস্তির মুখ থেকে রেহাই পেয়েছেন বিধায়ক। 'ভোটের কারণে রাস্তার কাজ করতে দেরি হচ্ছে, ভোট শেষ হলেই আগে এই রাস্তা করে দেওয়া হবে', এমন কাকুতি মিনতি করেই শেষ পর্যন্ত ছাড়া পান বিধায়ক মানগোবিন্দ।
ভারত যে আসলেই গণতান্ত্রিক দেশ এবং একজন বিধায়ককে কাজ না করলে সেই জনগণের দেওয়া শাস্তির মুখোমুখিও পড়তে হতে পারে, সেটা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিলেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। সবক্ষেত্রেই যদি এমন প্রতিবাদ হতো, তাহলে হয়তো একটু সমঝে চলতেন জনপ্রতিনিধিরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন