সম্পদ দে : গোটা রাজ্যবাসী দেখেছে, কিভাবে রাজ্যে প্রার্থীদের আবেদনপত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে ভোটের ফলাফল বেরোনো পর্যন্ত পুরোটাই কেটেছে বিক্ষিপ্ত গন্ডগোল এবং বোমাবাজির মধ্য দিয়ে। ১১ জুলাই ভোটের ফলাফল বেরোনোর পর দেখা যায়, রাজ্যের বেশিরভাগ গ্রামবাংলাই দখল করেছে তৃণমূল। তবে, এই নাটকীয় ভোটদান পর্ব যেন শেষ হয়েও হচ্ছে না।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী রাজ্যের ২০ টি বুথে আবারও হবে পঞ্চায়েত ভোট। বৃহস্পতিবার এই বিষয় নিয়ে একটি নোটিশও জারি করেছে কমিশন। মূলত তিনটি জেলার মোট ২০ টি বুথে ভোটের দিন ব্যালট পেপার নষ্ট করা এবং ফলাফলের দিন ব্যালট পেপার চুরি করার অভিযোগেই নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত।
তিনটি জেলার মধ্যে সবথেকে বেশি পরিমাণ ভোট বাতিল হয়েছে হাওড়ার সাঁকরাইলে। কেবলমাত্র এখানেই ভোট বাতিল করা হয়েছে ১৫ টি বুথে। তারপর রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা ২ নম্বর ব্লক, যেখানে বাতিল হয়েছে মোট ৪ টি বুথের ভোট।
হাবড়ায় বাতিল হওয়া বুথগুলির মধ্যে অন্যতম চর্চায় রয়েছে মহাদেব মাটির বুথটিও। মহাদেব মাটি হলেন সেই তৃণমূল প্রার্থী, যিনি ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে বিপক্ষের সিপিএম প্রার্থীর ব্যালট পেপার চুরি করে খেয়ে ফেলেছিলেন!
আর হাবড়া ছাড়াও সিঙ্গুরের ১ টি বুথে ভোট বাতিল করা হয়েছে। যে কটি বুথে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নতুন করে ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেই প্রতিটি বুথেই জয়ী দল হিসেবে উঠে এসেছিল তৃণমূল।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী এই ভোটগুলিকে পুনর্নির্বাচন বলা যাবে না। নির্বাচন আইন অনুযায়ী এই স্থানগুলিতে সম্পূর্ণ নতুন করে ভোটদান পর্বের ব্যবস্থা করা হবে। ভোটের সময় ঘটে যাওয়া বিক্ষিপ্ত গন্ডগোল, ব্যালট পেপার এবং বাক্স লুট করাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হাইকোর্টে মামলার দায়ের করেছেন।
এই মামলার শুনানিতেই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ কমিশনের ভূমিকা খতিয়ে দেখার আদেশ দিয়েছেন। আর তারপরেই বিরোধীদল এবং বহু সাধারন মানুষ মনে করছেন, হাইকোর্টের চাপে পড়েই নিজেদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ দেখাতে আবারও বিতর্কিত বুথগুলিতে পঞ্চায়েত ভোটের নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার রাজীব সিনহা।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভায় পৌছানোর পর সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে উঠতে চায় না। আদালতে আমরা আবেদন জানিয়েছি, এর শেষ দেখেই ছাড়বো।'
এতদিন ধরে একটানা ভোটপর্ব চলার পরে শেষ পর্যন্ত যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছিলেন রাজ্যের সাধারণ মানুষ, ঠিক তখনই নির্বাচন কমিশনের এই নতুন বিজ্ঞপ্তি আবারও নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করল রাজ্যবাসীকে। এখন কেবল দেখার পালা, অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে হতে চলা বুথগুলিতে ভোট কতটা নিয়মমাফিক হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন