দেবাশীষ গোস্বামী : সংবাদ মাধ্যম মারফত গোটা বিশ্ব ইতিমধ্যেই জেনে গেছে যে, ১৯১১ সালে ধ্বংস হওয়া টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে পর্যটকবাহী ডুবোজাহাজ টাইটান জলের নিচে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমেরিকার ওশানগেট সংস্থা দ্বারা পরিচালিত এই ডুবোজাহাজটি গত ১৮ জুন রবিবার সকালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে কানাডার নিউ ফকল্যান্ড থেকে রওনা হয়।
যাত্রা শুরুর ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট পর থেকেই এই ডুবোজাহাজটি মাদারশিপ পোলার প্রিন্সেসের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চার দিন ধরে খোঁজাখুঁজির পর আমেরিকান কোস্টগার্ডের মুখপাত্র জানান, এই ডুবোজাহাজটি জলের নিচে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তারা এর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন। মূল টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ যে জায়গায় পড়ে আছে, তার থেকে ১৬০০ ফুট দূরেই মিলেছে ধ্বংস হওয়া ডুবোজাহাজ টাইটানের টুকরো টুকরো অংশ।
এই পর্যটকবাহি ডুবোজাহাজটিতে ছিলেন বৃটেনের ব্যবসায়ী হ্যানিস হার্ডিং, যিনি এর আগে অনেকবার অনেক দূ্ঃসাহসিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন। ছিলেন পাকিস্তানের কোটিপতি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার পুত্র সুলেমান। এই ভ্রমণের মাধ্যমে ফাদার্স ডে উদযাপন করাই ছিল এই পিতা-পুত্রের লক্ষ্য।
জানা যাচ্ছে, শাহজাদার পুত্র সলমান ভয়ের কারণে এই ভ্রমণে রাজি ছিলেন না । কিন্তু বাবা শাহজাদা দাউদের জোড়াজোরিতে ১৯ বছরের ছেলে যেতে বাধ্য হন। এতে ছিলেন ওশানগেট সংস্থার মুখ্য কারিগরি আধিকারিক স্টকটন রাশ। যিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ এর বিশেষজ্ঞও বটে। আর ছিলেন ফ্রান্সের পল হেনরি নারজিওলেট। যিনি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ চালনায় বিশেষজ্ঞ।
এই ডুবোজাহাজটি জলের নিচে ধ্বংস হওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তার মধ্যে প্রধান কারণটি হলো, ক্যাটাস্ট্রোফিক ইমপ্লোসন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সমুদ্রের উপর থেকে প্রায় চার হাজার মিটার নিচে, যেখানে জলের চাপ ৬০০০ পাউন্ড প্রতি ইঞ্চি, সেখানে জলের চাপ সহ্য করতে না পেরে এই ডুবোজাহাজের মধ্যে বিস্ফোরণ হয়। যার ফলেই ডুবোজাহাজটি ধ্বংস হয়।
এই ডুবোজাহাজটির মধ্যে ১০০২ টি বৈদ্যুতিক থ্রাস্টার, রেফিন ক্যামেরা, ৪০০০০ লাইট এবং একটি রোবোটিক্স লেজার স্ক্যানার লাগানো ছিল। কোনও কারনে ডুবোজাহাজটিতে জল ঢুকে এর মধ্যেই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আবার কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের মতে, ১১২ বছর আগে ধ্বংস হওয়া টাইটানিকের কোনও অংশ আটকে গিয়েও ডুবোজাহাজ টাইটানে বিস্ফোরণ হতে পারে।
৬.৭ মিটার দৈর্ঘ্য, ২.৮ মিটার প্রস্থ ও ২.৫ মিটার উচ্চতা সম্বলিত এই ডুবোজাহাটির ওজন ১০৪৩২ কেজি। ডুবোজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ এবং পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে জলের উপরে নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। আমেরিকান কোস্ট গার্ডের মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, কঠিন হলেও তারা এটি উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমেরিকান কোস্টগার্ড এই কাজে দুটি দূরনিয়ন্ত্রক রোবটকে কাজে লাগিয়েছে।
ডুবোজাহাজ টাইটান আদৌ সমুদ্রের অতলে গিয়ে এই ধরনের অভিযানে যাওয়ার মতো উপযুক্ত ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, টাইটানিক চলচ্চিত্রের নির্মাতা জেমস ক্যামেরন আগেই সতর্ক করেছিলেন যে, সমুদ্রের ওই গভীর অংশে এই যাত্রা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।
যদিও তিনি নিজে টাইটানিক চলচ্চিত্রটি নির্মাণের স্বার্থে একাধিকবার টাইটানিকের ওই ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করে এসেছেন। সম্ভবত সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন