সমকালীন প্রতিবেদন : পাচারের জন্য এবারে বেছে নেওয়া হল আর্ন্তজাতিক রুটের ট্রেনকে। নিরাপত্তায় মোড়া ভারত–বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী বন্ধন এক্সপ্রেসে করে পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের ভারতীয় পণ্য। নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে সেই ট্রেনে তল্লাসী চালিয়ে উদ্ধার হল অবৈধ পণ্যগুলি।
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সুবিধার্থে দুই দেশের উদ্যোগে বছর কয়েক আগে চালু হয়েছে বন্ধন এক্সপ্রেস। ভারতের কলকাতা এবং বাংলাদেশের খুলনার মধ্যে এই ট্রেনটি যাতায়াত করে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা স্টেশন থেকে ছেড়ে পেট্রাপোল, বেনাপোল হয়ে খুলনা স্টেশনে পৌঁছায় এই ট্রেন।
সপ্তাহে ৩ দিন সকালে ভারত থেকে ছেড়ে ট্রেনটি বাংলাদেশে দুপুরের মধ্যেই পৌঁছায়। ওই ট্রেনই বাকি ৩ দিন বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে ভারতে পৌঁছায়। ট্রেনটি ছাড়ার আগে স্টেশনেই যাত্রীদের অভিবাসন দপ্তরের মাধ্যমে পাসপোর্ট এবং শুল্ক দপ্তরের মাধ্যমে লাগেজ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয়। গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর আগে মাঝপথে যাত্রীদের ওঠানামা করতে দেওয়া হয় না।
এমনই একটি নিরাপত্তায় মোড়া আর্ন্তজাতিক ট্রেনে করে পণ্য পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল। বিএসএফ সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ সূত্রে তাদের কাছে খবর আসে যে, ৩০ এপ্রিল কলকাতা স্টেশন থেকে যে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে, সেই ট্রেনে করে প্রচুর টাকার ভারতীয় পণ্য পাচারের চেষ্টা হচ্ছে।
সেই খবরের ভিত্তিতে পেট্রাপোল সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফের ১৪৫ ব্যাটালিয়নের জওয়ানেরা সতর্ক হয়ে যান। তৈরি করা হয় একটি বিশেষ দল। ট্রেনটি সকাল সাড়ে ৯ টা নাগাদ পেট্রাপোলে পৌঁছাতেই গোটা ট্রেনের দখল নিয়ে নেন বিএসএফ জওয়ানেরা। এরপর বিএসএফের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াডকে দিয়ে গোটা ট্রেনটিতে চিরুনি তল্লাসী চালানো হয়।
আর এই তল্লাসী চালানোর সময়েই ওই ট্রেনটি থেকে উদ্ধার হয় প্রসাধনী, ওষুধ, গৃহস্থালী সামগ্রী, তামাক, আতশবাজি এবং কাপড়। উদ্ধার হওয়া পণ্যগুলির আনুমানিক বাজার মূল্য ৬৮.৪৫ লক্ষ টাকা। ট্রেনের কোনও যাত্রী এই পণ্যগুলির বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় সেগুলিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরে সেগুলি শুল্ক দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এর আগে ঢাকা–কলকাতা রুটে বাসে করে চোরাই পণ্য পাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। সড়ক পথে পণ্য পরিবহনের ট্রাক থেকেও উদ্ধার হয়েছে সোনা। কিন্তু আর্ন্তজাতিক রুটের ট্রেনে পণ্য পাচারের ঘটনা এই প্রথম ধরা পরল। যাত্রী সেজে এই আর্ন্তজাতিক রুটকে অনেক নিরাপদ মনে করে পাচারকারীরা এই কাজ চালাচ্ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও প্রশ্ন উঠেছে, কড়া নিরাপত্তায় মোড়া একটি আর্ন্তজাতিক রুটের ট্রেনে করে কিভাবে নজর এড়িয়ে এতো টাকার পণ্য ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছিল। জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাও তো তাহলে এর সুযোগ নিতে পারে ? এই গাফিলতির দায় কার ? যাত্রী এবং দেশের নিরাপত্তায় এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সজাগ থাকার প্রয়োজন বলে মনে করে অভিজ্ঞমহল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন