Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩

জীবনের তাগিদে ‌নাকে অক্সিজেন টিউব নিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন সেন্টু

 

Sentu-is-driving-a-rickshaw-with-an-oxygen-tube-in-his-nose

সম্পদ দে : ‌কষ্টে ভারাক্রান্ত এই পৃথিবীতে একজন মানুষের অদম্য শক্তি এবং ইচ্ছার প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের সেন্টু। বাংলাদেশের রাজশাহীর একজন রিকশা চালক তিনি। নাকে অক্সিজেন টিউব দিয়ে জীবনের আসন্ন সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করেন তিনি। তার অটল দৃঢ়তা এবং নিঃস্বার্থতা বিশ্বব্যাপী মানুষের হৃদয় কেড়েছে, আবেগের একটি শক্তিশালী সংমিশ্রণ জাগিয়েছে।

সেন্টুর এই দুর্গম যাত্রা গভীর নির্জনতা এবং প্রতিকূলতার মধ্যে থেকে একটি। এমন একটি জীবনে যেখানে একাকীত্ব তাঁর একমাত্র অবিচল সঙ্গী বলে মনে হয়। তিনি নিজেকে রক্ষা করার কঠিন কাজের মুখোমুখি হয়েছেন। আর ভাগ্যেরও পরিহাস যে, এই সময়তেই তাঁর অর্থের অভাব শুরু হয়। 

মাসের শুরু হোক বা শেষ, তিনি নিজেকে সাহায্যহীন মনে করেন। নিজের প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই তাঁর কাছে। তবে, তাঁর নিজের এত বড় সংগ্রাম সত্ত্বেও অন্যদের জন্য সেন্টুর করুণা, মানবতা প্রতিফলিত হয়।

সেন্টুকে যেমন তাঁর নিজের অস্তিত্বের বোঝা সহ্য করতে হচ্ছে, তেমনি সেন্টুর নিজের সঙ্গে বোঝা টানতে হচ্ছে তার পরিবারেরও। সেন্টু আসলে এই কলিযুগের মাঝেও সেই পৌরাণিক মানুষগুলির মতো, যারা নিজেদের অসহনীয় বিপদ সত্ত্বেও কখনও অন্য কারও সাহায্যের আশা করে থাকে না। তাঁকে এককভাবে নিজেকে এবং তাঁর পরিবারকে টিকিয়ে রাখার উপায় জোগাড় করতে হয়। পরিবারের এবং নিজের বেঁচে থাকার ভার কেবল তার কাঁধেই থাকবে।

সেন্টু একপ্রকার ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁকে নিয়মিত অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে, যা তিনি তাঁর নাকের সঙ্গে সংযুক্ত একটি টিউবের মাধ্যমে নিজের সঙ্গে বহন করেন। সেন্টুকে তাঁর অক্সিজেন ট্যাংকের সঙ্গেই রাস্তায় রিক্সা চালানোর দৃশ্যটি মানুষজনকে তাঁর প্রতি গভীর বিস্ময় এবং প্রশংসায় ভরিয়ে তুলেছে।

তবে কোথাও না কোথাও প্রতিটি মানুষের মনে একটি দুঃখও লুকিয়ে আছে শুধুমাত্র এই ভেবে যে, এই যুগেও একটি মানুষকে নাকে অক্সিজেনের পাইপ দিয়েও রিকশা চালাতে হচ্ছে কেবলমাত্র নিজের এবং তাঁর পরিবারের মানুষজনদের পেট ভরানোর জন্য।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা সেন্টুর হৃদয়বিদারক ছবিটি অসংখ্য মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছে। তাঁর অনুপ্রেরণামূলক গল্প বাংলাদেশের শ্রম এবং কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের কানে পৌঁছেছে। তিনি সেন্টুকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সেন্টু। সেন্টুর সাহসী এই যুদ্ধ অনেকের জীবনকেই স্পর্শ করেছে, যার কারণে তাঁরা তাঁদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

পাঁচ বছর আগে একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে ৮০ হাজার বাংলাদেশি টাকা ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেছিলেন সেন্টু। দুর্ভাগ্যবশত, মাত্র দু বছর পর চুরি হয়ে যায় সেটি। নিরুপায় হয়ে সেন্টু পরে আরেকটি রিকশা কিনে নেন, যার জন্য সাপ্তাহিক প্রায় ১ হাজার ৩৫০ বাংলাদেশী টাকা তাকে ঋণ শোধ করতে হয়।

সেন্টুর মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও জটিল করতে, সেন্টুর প্রতিদিন ওষুধের পাশাপাশি তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন, যার পরিমাণ প্রতিদিন ৬০০ টাকা বা তার থেকেও বেশি। এই আর্থিক বোঝার মুখোমুখি হয়ে তিনি সাহসের সঙ্গে একপ্রকার প্রায় নিরুপায় হয়েই রাস্তায় নেমে আসে, তাঁর নাকের সঙ্গে একটি টিউব দিয়ে তার রিকশা টানতে থাকে, অক্লান্তভাবে তাঁর পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে এবং তার চিকিৎসার প্রয়োজন মেটাতে।





‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন