সম্পদ দে : মৃত্যুর পরেও যে মানুষের মনে বেঁচে থাকা যায়, তা প্রমাণ হয়ে এসেছে বারবার। আর ঠিক এমনভাবেই ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসায় এবং শিল্পকলায় বেঁচে রয়েছেন চিত্রশিল্পী মাধবচন্দ্র নাথ। তাঁর জন্মতিথিকে স্মরণ করতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরই ছাত্রছাত্রীরা।
প্রত্যেক শিল্পীরই ইচ্ছে থাকে যে, তিনি যেন এমন কোনও কাজ করে যেতে পারেন, যাতে তাঁর চলে যাওয়ার পরেও মানুষের মনে তিনি সারাজীবন বেঁচে থাকতে পারেন। বনগাঁর চিত্রশিল্পী মাধবচন্দ্র নাথেরও তেমনি ইচ্ছে ছিল। আর তাঁর ছাত্রছাত্রীদের তাঁর প্রতি ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা দেখে এইটুকু বোঝাই যায় যে, তাঁর সেই ইচ্ছে সত্যিই পূরণ হয়েছে।
শিল্পী মাধব নাথের জন্মতিথি উপলক্ষে মে মাসের ২৭, ২৮ এবং ২৯ তারিখ জুড়ে বনগাঁর টাউন হলে এক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। স্বর্গীয় স্যারের জন্মতিথি উপলক্ষে তাঁর প্রাণের ছাত্রছাত্রীরা ব্যবস্থা রেখেছেন আঁকা প্রদর্শনী, নৃত্য, সঙ্গীত পরিবেশনা এবং ওয়ার্কশপের মতো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
আয়োজক কমিটির পক্ষে মাধব স্যারের ছাত্রী শ্রাবণী হালদার বলেন, 'স্যারের প্রাণ ছিল ছবি। আর আমরা সেই ছবির মাধ্যমেই স্যারকে আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। আমরা আলাদা করে তাঁকে স্মরণ করতে চাই না। কারণ, উনি আমাদের মনে সব সময় আছেন।'
২৭ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনই দুপুর ৩ টে থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। ২৮ তারিখ রবিবার বিকেলে ছোটদের জন্য ছবি আঁকার উপর কর্মশালার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে শহরের খুঁদেরা ছোট থেকেই মননশীল এবং প্রতিভাবান হয়ে ওঠে।
এই চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন স্বর্গীয় শিল্পী মাধব নাথের স্ত্রী অনুরাধা নাথ। এবছর এই উদ্যোগ দ্বিতীয় বর্ষে পরল। ছাত্র সৌভিকের কথায়, স্যারের স্মরণে প্রথম বছর চিত্র প্রদর্শনী করার পর তারা বেশ ভালোই সারা মেলে। আর সেই কারণে এবছরও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সকলের ইচ্ছা এরকমভাবেই প্রতিবছর স্যারের জন্মতিথি উপলক্ষে এই চিত্র প্রদর্শনীকে একটি অনুষ্ঠান হিসেবে পালন করে যাওয়া হবে।
উদ্বোধনের পর প্রথমদিন থেকেই বহু শিল্প অনুরাগী মানুষ এই টিত্র প্রদর্শনী দেখতে হাজির হন। টাউন হলের হলঘরে ঢোকার পরেই চোখে পড়ে চারিদিকে রাখা বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর ছবির দিকে।
আর তার মাঝেই একদিকে রাখা আছে চিত্রশিল্পী মাধব নাথের মালা পরানো শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া একটি ছবি। আর তার পাশেই রাখা রয়েছে একটি হোয়াইট বোর্ড, যেখানে বিভিন্ন মানুষ কিছু লিখে তাঁদের স্যারের প্রতি ভালোবাসার ছাপ রেখে যাচ্ছেন।
হয়তো শিল্পী মাধব নাথ এইটাই চেয়েছিলেন যে, তিনি চলে যাওয়ার পরে মানুষ তাঁকে মনে রাখুক কেবলমাত্র তাঁর ক্যানভাস কিংবা রং তুলিতে নয়, বরং মনে রাখুক তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দিয়ে। শিল্পী মাধব নাথের সেই চাওয়াকে মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরই উত্তরসুরীরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন