সম্পদ দে : ছোটবেলায় আমরা 'দা জঙ্গল বুক' কে না দেখিনি। ছোটবেলার অগুন্তি স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এর প্রধান চরিত্র মোগলির সাথে। কিভাবে জঙ্গলের ভিতরেই হারিয়ে যাওয়া এক ছোট্ট শিশু সেখানকার বিভিন্ন পশুপাখিদের সঙ্গে মিলেমিশে ধীরে ধীরে বড় হয়, তারই গল্প 'দ্য জঙ্গল বুক'। এই গল্পটি তো কল্পনা মাত্র। তবে বাস্তব জীবনেও এমনই এক মোগলি আছে আমাদের মাঝে। তার নাম এলি। আসলে সাধারণ মানুষদের থেকে সে একটু আলাদা। সেই জন্যই এলি গ্রামের মানুষদের কাছেও বিদ্রুপের পাত্র হয়ে উঠেছিল।
আফ্রিকার একটি ছোট্ট গ্রামে বসবাস এলির। সাধারণ সুস্থ মানুষদের মতো নয় সে। শরীরের তুলনায় এলির মাথা বেশ খানিকটা বড়। এমনকি মুখের আকৃতি এবং দাঁতের গঠনও অনেকটাই আলাদা। ছোটবেলা থেকেই সেরকম আদর যত্ন পায়নি সে। একুশ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের স্নেহের থেকেও বঞ্চিত ছিল সে।
শেষ পর্যন্ত গ্রামের মানুষদের বিদ্রুপের হাত থেকে বাঁচতেই জীবনের বেশিরভাগ সময়টা সে কাটিয়ে দিচ্ছে জঙ্গলে গিয়েই। আসল জীবনের মোগলি এলির কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই তাকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে নেটিজেনদের মধ্যে।
সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এলির মা জানান, তার ছেলের এই অবস্থার কারণ তার মা নিজেই। নিজেই কোনওদিন সঠিকভাবে এলিকে দেখাশোনা করতে পারেননি তিনি। এলি তার মায়ের ছয় নম্বর সন্তান। এর আগের পাঁচটি সন্তান তার মা অনেক আগেই হারিয়েছেন।
এলির মা আরও জানান, আসলে এলির একটি অসুখ আছে, যার নাম মাইক্রোসেফালি। যার কারণে এলির শরীরে ছিল বেশ কিছু সমস্যা। এমনকি সাধারন মানুষদের মতো কথাও বলতে পারত না সে। আকার ইঙ্গিতেই তার মনের ভাব প্রকাশ করত। গ্রামের লোকেরা তাকে তাড়া করলে বা ঢিল মারলে, বিদ্রুপের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করত এলি।
এলি সাধারণ মানুষদের মতো খাবার খেতে পছন্দ করে না। বরং তার প্রিয় খাবার কলা। এমনকি জঙ্গলে থাকতে থাকতে সেখানকার পশুপাখিদের মতো বিভিন্ন কার্যকলাপও সে করতে পারে বড়ই অনায়াসে। যেমন তরতরিয়ে গাছে উঠে যাওয়া, অথবা ভীষণ দ্রুত গতিতে দৌড়ানো। অনেকে তো এও বলছেন যে, এলি নাকি বিশ্বের দ্রুততম মানুষ বোল্টের সমান জোরে দৌড়াতে পারে।
এলির সম্বন্ধে তার মা এও জানিয়েছেন যে, এলি সাধারণ মানুষদের মতো কথাও বলতে পারে না এবং অন্যান্য কাজও করতে পারে না। সে একমাত্র বিভিন্ন আকার ইঙ্গিতে এবং মুখভঙ্গির দ্বারা বলার চেষ্টা করে। 'আফ্রিম্যাক্স' নামক একটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলে তার সাক্ষাৎকার দেখানোর সময় তাদের পারিবারিক এবং আর্থিক সমস্যার কথাও তুলে ধরা হয়।
সেখানে দেখা যাচ্ছে, এলিদের পরিবারে এতটাই আর্থিক অনটন যে, খাদ্যের অভাবে তরুণ এলিকে জঙ্গলে গিয়ে ঘাস খেতে হচ্ছে খিদের তাড়নায়। টিভি চ্যানেলে তাদের এই আর্থিক অনটনের কথা তুলে ধরার পর থেকে প্রচুর মানুষই তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই প্রায় ৪০০০ ডলার এর থেকেও বেশি অনুদান জমা হয়েছে তাদের জন্য।
বর্তমানে আর্থিক সাহায্য পাওয়ার পরে এলিদের সংসার আগের থেকে বেশ খানিকটা ভালো চলছে। এখনও অনেকে আর্থিক সাহায্য পাঠাচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও অন্তত এতোটুকু সাহায্য তারা পাবেন, যাতে তাদের সংসার কোনওমতে চলে যায়। এলির মায়ের আশা, অনুদান পাওয়া এই টাকাগুলি দিয়ে তারা যেমন নিজেদের সংসার চালাতে পারবেন, ঠিক তেমনি এলির সুস্থতার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে পারবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন