সম্পদ দে : সারা বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষজনের পছন্দের পর্যটন স্থানগুলিকে নিয়ে প্রতিবছরই বিভিন্ন সংস্থা একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। আর তাদের মধ্যে সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য হল 'টাইম ম্যাগাজিন'। যথারীতি এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালেও টাইম ম্যাগাজিনের একটি তালিকা প্রকাশ হয়েছে, যেখানে তারা জানিয়েছে পৃথিবীর সেরা ৫০টি জনপ্রিয় পর্যটন স্থানের নাম।
আর সেই তালিকায় আমাদের দেশ ভারতবর্ষেরও দুটি স্থান থাকায় যথেষ্ট উৎফুল্ল গোটা দেশবাসী। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কোন পর্যটনস্থান দুটি জায়গা করে নিয়েছে টাইম ম্যাগাজিনের ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট ডেসটিনেশন ২০২৩ এর তালিকায়।
দিনকয়েক আগেই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গন্তব্যস্থানগুলির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের দুটি স্থান এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এই খবর ভারতের প্রতিটি নাগরিকের জন্য যেমন অপরিসীম আনন্দ বয়ে এনেছে, ঠিক তেমনি এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয়ও বটে।
২০২০ সাল থেকে মহামারীর কারণে গোটা পৃথিবী জুড়েই পর্যটন শিল্প ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আর এবার এই তালিকায় থাকা ভারতের দুটি ভ্রমণ স্থান দেশের অর্থনীতির জন্য আশার আলো বয়ে আনবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
তালিকায় যেদুটি ভ্রমণস্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই দুইটি স্থান হলো–
১| লাদাখ।
২|উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ।
প্রথমে আসা যাক তালিকাতে থাকা লাদাখের কথায়। লাদাখকে ভারতের উত্তরাঞ্চলের একটি উচ্চ মরুভূমি বলা হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যতম সেরা গন্তব্য হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে এই স্থান। এর রুক্ষ ভূখণ্ড এবং মন্ত্রমুগ্ধ সৌন্দর্য সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে।
লাদাখ তার মনোরম ল্যান্ডস্কেপ, প্রাচীন মঠ এবং প্রাণবন্ত সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অঞ্চলটির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়েছে। প্রচুর মানুষই সম্প্রতি নিজেদের বাইক এবং চারচাকা নিয়ে এখানে ঘুড়তে এবং অ্যাডভেঞ্চার করতে আসছেন। সেইজন্যেই এটি অ্যাডভেঞ্চারে উৎসাহী এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে৷
তালিকার দ্বিতীয় গন্তব্য হল ময়ূরভঞ্জ। পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িশা রাজ্যে অবস্থিত একটি কম পরিচিত স্থান। ময়ূরভঞ্জের নাম সচরাচর শুনতে পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত ময়ূরভঞ্জ সাম্প্রতিক সময়ে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হয়ে উঠেছে।
এটি মূলত একটি মালভূমি এলাকা, যা কিনা আগে ভারতের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলির মধ্যে ছিল না। তবে এখন দেশী এবং বিদেশী– উভয় পর্যটকদের জন্য এটি ধীরে ধীরে একটি হটস্পট হয়ে উঠছে। এর শান্ত পরিবেশ, আদিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, একাধিক মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এটিকে ভ্রমণকারীদের কাছে একটি আদর্শ গন্তব্যস্থল হিসেবে গড়ে তুলেছে।
ফলে ঘন জঙ্গলের ভেতর শান্ত পরিবেশে জলপ্রপাতের আওয়াজ শুনতে শুনতে কয়েকদিন কাটিয়ে দিতে চাইলে যেতেই হবে উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জে। বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে ভারতের এই দুটি স্থানের স্বীকৃতি দেশের অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি হিসেবে উঠে আসছে।
পর্যটন শিল্প ভারতের জিডিপিতে অন্যতম প্রধান অবদানকারী। তবে মহামারী এটিকে সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু করে দিয়েছিল। বর্তমানে আবারও পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই স্থানগুলির স্বীকৃতি শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সাহায্য করবে বলেই বিশেষজ্ঞদের আশা।
সেই সঙ্গে টাইম ম্যাগাজিনের এই স্বীকৃতিটি এই সত্যটিকেও তুলে ধরে যে, মানুষ এখন ইউরোপ ছাড়িয়েও নতুন গন্তব্যের সন্ধান করতে শুরু করেছে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন স্থান জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ফলস্বরূপ, এই অঞ্চলগুলিতে যেমন পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটছে, ঠিক তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা আনছে এবং এই অঞ্চলগুলির বৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে।
সবশেষে এটা বলাই যায়, লাদাখ এবং ময়ূরভঞ্জকে বিশ্বের সেরা দুটি গন্তব্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া ভারতের জন্য একটি অন্যতম গর্বের মুহূর্ত। এটি দেশের সমৃদ্ধ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রদর্শন করে এবং সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। সারা বিশ্ব জুড়ে এক মহামারীকে কাটিয়ে ওঠার পর পর্যটন শিল্পের পুনরুদ্ধারের পথে ভারতবর্ষের জন্য এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহেই দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং পর্যটন শিল্পের প্রচারে সহায়তা করবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন