সমকালীন প্রতিবেদন : সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যগুলির মধ্যে একটি। সুন্দরবন তার অনন্য বাস্তুতন্ত্র এবং বন্যপ্রাণীর জন্য যেমন পরিচিত, মধুর জন্যও ঠিক তেমনই বিখ্যাত। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সংগ্রহ করা হয়।
সম্প্রতি রাজ্য বনবিভাগ মধু সংগ্রহকারী এবং মধু সংগ্রহে উৎসাহী মানুষদের জন্য বেশ কিছু সুখবর ঘোষণা করেছে। সূত্রের খবর, গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সুন্দরবনের মধুর চাহিদা। এর ফলে মধুর বাজারমূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বর্তমানে অনেক বেশি।
রাজ্য বন বিভাগ আশা করছে যে, দাম বৃদ্ধির ফলে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহের পরিমাণ আরও বাড়বে, আরও বেশি কৃষক তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে উৎসাহিত হবেন। মধু সংগ্রহকারীদের আরও উৎসাহিত করতে বন বিভাগ মধুর দাম কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই পদক্ষেপের ফলে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেওয়া কৃষকদের উপকার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বন বিভাগের মতে, এটি আরও বেশি লোককে মধু সংগ্রহের মতো কাজকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মধু সংগ্রহের পেশায় যুক্ত মানুষদের 'মৌলে' বলা হয়।
এই বছরের মধু সংগ্রহের মৌসুম ৭ এপ্রিল শুরু হতে চলেছে। বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪০-৫০ টি দলকে মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হবে। আগামী এক মাস সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন বন থেকে প্রায় ৩৫০ মৌলে কে মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হবে।
এই মধু সংগ্রহ করার পরে প্রতি কেজি ২২৫-২৫০ টাকা এবং অতিরিক্ত ২০ টাকা দরে বন বিভাগের কাছে বিক্রি করা যাবে। গত বছর সুন্দরবন টাইগার প্রজেক্ট এলাকায় ৪৩ টি দলের প্রায় ৩০০ মানুষ মধু সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। তাঁরা মোট ১২ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বন বিভাগ আশাবাদী যে, এই বছর মৌলেরা আরও বেশি মধু সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন।
তবে জঙ্গলের ভেতরে এই মধু সংগ্রহ করতে যাওয়া যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। জঙ্গলের ভেতরে বাঘ এবং জলের কাছাকাছি এলাকাতে কুমিরের ভয়ও থেকে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই এই মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মৌলেদের কে বন্যপ্রাণীর শিকারে পরিণত হতে হয়। আর সেই জন্যই মধু সংগ্রহকারীদের এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন বিভাগ সকল মৌলের জন্য মাথাপিছু ৫ লাখ টাকার বীমার ব্যবস্থাও চালু করেছে।
বন বিভাগ এবছর 'অপারেশন গোল্ডেন হানি' নামে একটি বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে। যে এলাকায় মৌমাছি পালনকারীরা সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করবেন, সেখানে বন বিভাগের একটি টহলদারি দল উপস্থিত থাকবে।
মৌ পালকেরা কোনও সমস্যায় পড়লে সাহায্যের জন্য দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে টহলদারি দলটি। মধুর দাম বৃদ্ধির ঘোষণা এবং বনবিভাগের গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন মধু সংগ্রহকারী এবং উৎসাহীরা। সুন্দরবনের বিখ্যাত মধু সংগ্রহের প্রচার এবং এলাকার অনন্য ইকোসিস্টেম রক্ষার দিকে এটি যে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন