সম্পদ দে : আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা একটি যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটাতে চলেছে। নাসা আগামী দুই বছরের মধ্যে একটি নতুন, আরও উন্নত এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিবিশিষ্ট হেলিকপ্টার বানাতে চলেছে, যা কিনা মঙ্গলগ্রহে ঘুরে ঘুরে এই লাল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, তা পৃথিবীতে বসে থাকা বিজ্ঞানীদের কাছে জানাবে।
নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির শীর্ষ বিজ্ঞানী ডঃ গৌতম চ্যাটার্জি এব্যাপারে জানিয়েছেন, নাসা ইতিমধ্যেই মঙ্গলে হেলিকপ্টারের একটি প্রোটোটাইপ পাঠিয়েছে, যেখানে এটি সফলভাবে ৪৯ টি ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে। তবে, মঙ্গলে পাঠানোর জন্য হেলিকপ্টারের নির্মাণ মোটেও সহজ কাজ ছিল না।
আগের পাঠানো হেলিকপ্টারটিতে বেশকিছু খামতিও ধরা পড়েছিল। তারজন্যই নাসা এখন একটি আরও উন্নত সংস্করণের উপর কাজ করছে, যা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত হবে। ডঃ চ্যাটার্জি এসম্পর্কে ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, মঙ্গল অভিযানে পাঠানোর জন্য হেলিকপ্টারের যন্ত্রগুলিকে আরও পোর্টেবল করার জন্য ক্ষুদ্রতর করা হচ্ছে, কারণ পৃথিবী থেকে মঙ্গলগ্রহে যেকোনও কিছু পাঠাতে প্রায় সাত মাস সময় লাগে৷
যত বেশি দিন সময় লাগবে, তত বেশি জ্বালানি খরচ হবে। তাই যন্ত্রাংশগুলিকে আরও পোর্টেবল এবং ক্ষুদ্র করা গেলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে যেমন খরচ কমানো যাবে, তেমনি হেলিকপ্টারটিকেও আরো ভরসাযোগ্য বানানো যাবে। নাসার মুখোমুখি হওয়া প্রধান চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি ছিল মঙ্গলে পৃথিবীর তুলনায় অপেক্ষাকৃত হালকা মহাকর্ষ বল।
যার জন্য হেলিকপ্টারের ক্ষমতা পরীক্ষা করতে নাসার বিজ্ঞানীদেরকে একটি মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়ার মতো সিমুলেশন তৈরি করতে হয়েছিল। মঙ্গল অভিযানের এই যাত্রা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও মঙ্গল অভিযানে পাঠানো হেলিকপ্টার অনেক দূর উড়তে এবং মূল্যবান তথ্য পৃথিবীতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল।
সম্প্রতি কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মঙ্গলে হেলিকপ্টার যাত্রা সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন বিজ্ঞানী ডঃ গৌতম চ্যাটার্জি। মঙ্গলগ্রহ নিয়ে নাসার বিজ্ঞানীদের এত আগ্রহের কারণ, বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এই লাল গ্রহে একসময় একটি বিশাল জলাশয় ছিল, যা পরে শুকিয়ে গেছে।
আর আমরা সকলেই জানি, যেখানে জল আছে সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা কোথাও না কোথাও টিকে থাকে। তাই অতীতে কোনও সময়ে মঙ্গলে প্রাণ থাকতে পারে– এই কথা চিন্তা করেই আরও অনুসন্ধান চালানোর জন্য নতুন মঙ্গলযান হেলিকপ্টারটি একটি র্যাডার দিয়ে সজ্জিত করা হবে, যা বিজ্ঞানীদের গ্রহের পৃষ্ঠ সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে সাহায্য করবে।
তবে মঙ্গলই নাসার গবেষণা প্রচেষ্টার একমাত্র লক্ষ্য নয়। ডঃ চ্যাটার্জি এব্যাপারে জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ বরফে ঢাকা বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা নিয়েও তাঁরা অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, বরফের নীচে একটি মহাসাগর থাকতে পারে এবং সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও যেতে পারে।
আর সেই খোঁজ চালাতেই সেখানে র্যাডার স্পেকট্রোমিটার সহ বিভিন্ন যন্ত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ড. চ্যাটার্জি আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুকেও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একসময় মিলিমিটার তরঙ্গের উপরেও কাজ করেছিলেন, যা কিনা এমন একটি ক্ষেত্র যার উপর নাসা অনুসন্ধান করে চলেছে।
উদ্ভাবন এবং আবিষ্কারের এই চেতনায় নাসা মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করতে এবং জীবনের উৎস সম্পর্কে কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সীমানাকে আরও আগে ঠেলে দিচ্ছে৷ সামগ্রিকভাবে, ড. চ্যাটার্জির বক্তৃতাটি নাসার কাজের একটি আকর্ষণীয় দিক, যার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, মানুষ কিভাবে ক্রমে নিজের আশপাশকার পরিবেশ ছাড়িয়ে আরও দূরদূরান্তে চলে যাচ্ছে, কেবল এই অন্ধকার মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন