সম্পদ দে : ১৯৫৯ সালে মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু হয়েছিল পথচলা। আর আজ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৮ হাজারের কাছাকাছি। এমন স্কুলের অবস্থান রয়েছে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে। আর এই স্কুলই এখনও পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম স্কুল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত এই স্কুলের নাম 'সিটি মন্টেসরি স্কুল'। গোটা লখনউ শহর জুড়ে এই স্কুলের মোট ২০ টি ক্যাম্পাস রয়েছে।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা জগদীশ গান্ধী এবং ডঃ ভারতী গান্ধীর একটি এমন স্কুল তৈরি করার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, যা শিশুদের নিরাপদ, রঙিন এবং খেলার ছলে পড়াশোনা শেখার পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি তাদের নৈতিক চরিত্রের বিকাশকেও জোরদার করে তুলবে।
তাদের প্রতিষ্ঠা করা এই স্কুল এই লক্ষ্য এবং সঙ্গে আরও অনেক কিছুই অর্জন করেছে। হাজার হাজার শ্রেণীকক্ষ, ৩৭০০ টি কম্পিউটার, প্রচুর শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ চার হাজার শিক্ষাকর্মী রয়েছেন এই স্কুলে। সিটি মন্টেসরি স্কুলটি আসলেই কঠোর পরিশ্রম, উৎসর্গীকরণ এবং শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে অর্জন করা একটি প্রতিমূর্তি। স্কুলটিতে চারটি বিভাগ রয়েছে। সেগুলি হল— প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক, জুনিয়র এবং সিনিয়র।
পাঁচ থেকে সতেরো বছর বয়সী শিশুদেরকে একসঙ্গে একক ভবনে পড়ানো মোটেও সহজ কাজ নয়। তবুও এই স্কুল এই কাজটি করে দেখিয়েছে। সিটি মন্টেসরি স্কুল বা সিএমএস এমন একটি স্থান যেখানে কিনা, শিশুদের বিকাশ ও নৈতিক চরিত্র গঠনের ওপরে যথেষ্ট জোর দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে এটাও কম কথা নয় যে, 'বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্কুল' হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থানও পেয়েছে এই স্কুলটি। ২০১৩ সালে সিএমএস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বিশ্বের সবথেকে বৃহত্তম স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
তবে কেবলমাত্র ওয়ার্ল্ড রেকর্ডই নয়, এবাদেও আরও বেশ অনেকগুলি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারও লাভ করেছে এই স্কুল। স্কুলের জুনিয়র বিভাগে ১১ বছর থেকে ১৩ বছর বয়সী পড়ুয়ারা পড়াশোনা করে। আর সেখানেই প্রাইমারি এবং প্রি প্রাইমারি বিভাগে আরও ছোট শিশুরা মজাদার ও নিরাপদভাবে বেশ আনন্দের সঙ্গেই পড়াশোনা করার সুযোগ পায়।
এই দিকটা সবসময় খেয়াল রাখা হয়, যেন প্রতিটি শিশু একটি সুন্দর পরিবেশের মধ্যে পড়াশোনা করে এবং পরীক্ষার প্রতি তাদের যেন এক অটুট ভালোবাসা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক দক্ষতা গড়ে ওঠে। ছোটবেলা থেকেই প্রতিটি শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা হয়, যাতে তারা বড় হয়ে তাদের জীবনে যেকোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষমতা রাখতে পারে।
মোট কথা, ২০১৩ সালে পাওয়া গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের এডুকেশনাল ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনে প্রথম স্থান অধিকারী ভারতের লখনউয়ের স্কুল হিসেবে পরিচয় পাওয়া। এই সমস্ত কিছুই সিটি মন্টেসরি স্কুলের মহৎ কাজের কয়েকটি ছোট পরিচিতি মাত্র।
তবে যেভাবে এই স্কুল ভবিষ্যতের প্রজন্মের শিরদাঁড়া তৈরি করতে করতে বিশ্বের বৃহত্তম স্কুল হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছে, তাতে তাদের এই উঠে দাঁড়ানো এবং এগিয়ে চলার গল্পকে কুর্নিশ জানায় গোটা দেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন