সমকালীন প্রতিবেদন : শীতকাল শেষ হয়ে ইতিমধ্যেই গরমের আঁচড় লাগতে শুরু করেছে। এখন থেকে বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্তও গ্রীষ্মকাল মানে আমাদের মাথায় আসতো কুলফি, আমের শরবত, কালবৈশাখী ঝড়, বিকেলে আম কুড়ানো প্রভৃতি।
তবে আজকাল গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহের দৌলতে গরমকাল আসলেই আমাদের সবার মাথায় প্রথম যে জিনিসটির কথা মনে আসে তা হলো, এয়ার কন্ডিশনার। আজকাল শহরাঞ্চলে প্রতি ১০ টি বাড়ির মধ্যে প্রায় ৩ টি কিংবা ৪ টি বাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার অথবা কুলার অবশ্যই দেখতে পাওয়া যায়।
মফ:স্বল কিংবা গ্রামাঞ্চলে এর পরিমাণ অনেকটা কম হলেও দিন দিন তা বাড়ছে বই কমছে না। তবে এই এয়ার কন্ডিশনার বা এসির ঠান্ডা হাওয়ায় থাকতে যতটা না ভালো লাগে, অনেক ক্ষেত্রে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাও হতে পারে।
বেশি সময়ের জন্য একটানা এসির ঠান্ডা হাওয়ায় থাকা অথবা বারংবার এসির ঠান্ডা হাওয়া থেকে বাইরের গরম হওয়ায় অথবা বাইরের গরম হাওয়া থেকে এসির ঠান্ডা হাওয়ায় যাতায়াত করলে ঠান্ডা লাগা, জ্বর হওয়ার মতো আরো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া, অনেক ক্ষেত্রেই বর্তমানে আলাদা প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকলেও এখনো পর্যন্ত বহু কোম্পানি ফ্রিজ এবং এসি ঠান্ডা করতে ব্যবহার করে থাকে হাইড্রোক্লোরোফ্লুরো কার্বন। যা কিনা পরিবেশে গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করে। যার ফলে পৃথিবীর ওজনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাছাড়া, প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে এত বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে বাড়িতে এসি লাগানো সম্ভব নয়। তাহলে তাদের ক্ষেত্রে এই গ্রীষ্মকালের তাপপ্রবাহের হাত থেকে বাঁচার উপায় কি? তেমন কিছু নয়। মাটির হাড়ি, সামান্য জল কিংবা বরফ এবং একটি ছোট্ট শক্তিশালী ফ্যান।
হ্যাঁ। একদম ঠিক শুনছেন। আপনারাও এখন কারি কারি টাকা খরচ না করে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার ভেতরেই বাড়িতে বানিয়ে ফেলতে পারবেন হোমমেড ন্যাচারাল এসি। তবে কিভাবে কাজ করবে এটি? আর কিভাবেই বা এটি বাড়িতে বসেই বানানো সম্ভব?
খুব সহজেই সামান্য কিছু উপকরণ এবং পরিশ্রমের মাধ্যমেই আপনি নিজের ঘরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রা থেকে বেশ কয়েক ডিগ্রি কমিয়ে ফেলতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে প্রথমে একটি মাটির হাঁড়ি নিতে হবে। তার গায়ের একটি পাশে বেশ কিছু ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলতে হবে।
ছিদ্রগুলি এমনভাবে করতে হবে, যাতে হাঁড়িতে বেশ খানিকটা বরফ অথবা জল রাখলে তা যেন উপচে কিংবা গড়িয়ে না পড়ে। হাঁড়ির একপাশে এই ছিদ্রগুলি করার পরে অন্যপাশে এমনভাবে কাটতে হবে, যাতে সেখানে একটি ছোট্ট ফ্যান লাগানো যায়।
হাঁড়ি কাটা এবং তাতে ছিদ্র করার কাজ সম্পন্ন হলে যেকোনো ইলেকট্রিক এর দোকান থেকে একটি ছোট্ট ফ্যান কিনে নিয়ে এসে এর গায়ে লাগিয়ে দিতে হবে। আপনি চাইলে ঘরের তাপমাত্রায় কতটা তফাৎ আসছে, তা দেখার জন্য একটি ছোট্ট ডিজিটাল থার্মোমিটার স্ক্রিন কিনে নিয়ে এসে এর সঙ্গে লাগাতে পারেন।
হাঁড়ির গায়ে ফ্যান লাগানোর পরে এর সমস্ত ইলেকট্রিক কানেকশনগুলি করা হয়ে গেলে এর ভেতরে বেশ খানিকটা জল ঢেলে দিতে হবে। অথবা আপনি চাইলে বেশ খানিকটা বরফও দিতে পারেন। তারপরে একে বাড়ির যেকোন প্লাগের সঙ্গে অথবা একটি ব্যাটারির সঙ্গে কানেক্ট করে জানলার গায়ে রেখে দিলেই কেল্লাফতে।
হাঁড়ির গায়ে লাগানো ছোট্ট ফ্যানটি বাইরের গরম হাওয়াকে টেনে হাঁড়ির ভেতরে নিয়ে আসবে। তারপর সেই হাওয়াটি হাঁড়ির ভেতরে থাকা জল অথবা বরফের সংস্পর্শে এসে ঠান্ডা হয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করবে। আর এভাবেই বেশ কয়েকটা হাঁড়ি দিয়ে হোমমেড এসি বানিয়ে ঘরে লাগিয়ে নিলেই কম খরচে আপনিও ঠান্ডা হাওয়ার মজা নিতে পারবেন এই গ্রীষ্মে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন