সম্পদ দে : আনারসের পাতা থেকে তৈরি হচ্ছে সুতো। টেক্সটাইল মার্কেটে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আনারসের পাতা থেকে যে এত মূল্যবান সুতো তৈরি সম্ভব, তা জানতে পেরে রীতিমতো হতবাক কৃষকেরা। আর এই সুতো তৈরির বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণের জন্য শিবিরের আয়োজন হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলায়।
প্রত্যেকদিনের রোজনামচায় কাপড়ের প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা, তা জানেন না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গায়ে পড়ার সাধারণ জামাকাপড় থেকে শুরু করে জানলা দরজার পর্দা হোক কিংবা বিছানার চাদর থেকে শুরু করে ফ্যাশন জগতের মূল্যবান পোশাক। কাপড় ছাড়া সম্ভব নয় কোনটাই।আর এই সমস্তরকম কাপড় তৈরি হয় সুতো দিয়ে। কিন্তু এই সুতো তৈরি হয় কি দিয়ে?
যদি বলা হয় আনারসের পাতা দিয়ে, তাহলে আমার আপনার মতো বহু মানুষই তা বিশ্বাস করে উঠতে পারবেন না। কিন্তু এটিই সত্যি। এখন থেকে আনারসের পাতা দিয়েও সম্ভব সুতো তৈরি করা। তাও যা-তা রকমের নয়, তৈরি হয় মূল্যবান সুতো।
আনারসের পাতা থেকে বের হওয়া ফাইবার দিয়ে তৈরি হওয়া সুতোর চাহিদা টেক্সটাইল মার্কেটে বেশ উঁচুতে। এই ফেব্রিক দিয়ে তৈরি সুতো মোলায়েম, স্বচ্ছ এবং নরম হয়ে থাকে। যার জন্য এই সুতো দিয়ে তৈরি কাপড় হয় খুবই আরামদায়ক।
আর এই সুতোর উচ্চ চাহিদা এবং দামের কথা ভেবে কিভাবে এই সুতো তৈরি করা যায়, সেই বিষয়ে কৃষকদেরকে নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলায় চোপড়া ব্লকে। কলকাতা থেকে আসা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল ফাইবার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির পক্ষ থেকে সুতো তৈরি করার ডেমো মেশিন দিয়ে কিভাবে সুতো তৈরি করা যায়, সেটা দেখানো হচ্ছে কৃষকদের।
জানা গেছে, চোপড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় আনারসের চাষ হয়। সেই আনারস বিক্রি করে দেওয়ার পর তার পাতাগুলি ফেলে দেওয়া হতো কিম্বা গবাদি পশুদেরকে খাইয়ে দিতেন কৃষকরা। কিন্তু আনারসের পাতা দিয়ে যে এত দামি সুতো তৈরি হয়, সেই বিষয়টি অজানা ছিল কৃষকদের।
কৃষকেরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর আনারসের ফলন বেশ ভালই হয়েছে। ছট পুজোর কারণে এবারে আনারসের চাহিদাও ছিল বেশ ভালো। চাষ হওয়া আনারস রপ্তানি হয়ে যায় গোরখপুর, পাটনা, বেনারস ইত্যাদির মতো বিভিন্ন রাজ্যে ও শহরে। এবছর ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা আশা করছেন যে, সুতো তৈরির জন্য পাতার পরিমাণও পাওয়া যাবে প্রচুর।
পাতা থেকে ফাইবার বের করা বেশ শ্রমের কাজ। সেই জন্য এর থেকে পাওয়া ফেব্রিকের দামও হয় অনেক বেশি। সুতো বানানোর প্রক্রিয়াটিও বেশ জটিল। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছের প্রায় ৩৫ থেকে ৩৬ টি মতো পাতা হয়। একটি গাছে একবারই ফল হয়। তাই ফল দেওয়ার পর গাছ থেকে সমস্ত পাতা প্রথমে কেটে ফেলা হয়।
তারপর সেই পাতা কেটে তার থেকে হাতে করে বের করা হয় ফাইবার। এরপর একে জলে বেশ ভালো করে ধুয়ে এবং রোদে শুকিয়ে আরও বেশ কিছু পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয় এই সুতো।
আগামী দিনে যাতে মহিলাদেরকে নিয়ে সুতো তৈরি করার জন্য শিল্প গড়ে তোলা যায় এবং মহিলা তথা গোটা গ্রাম ও ব্লককে একে একে স্বনির্ভর করে তোলা যায়, সেই দিকে লক্ষ্য রাখছে জেলা প্রশাসন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ন্যাচারাল ফাইবার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি কর্তৃপক্ষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন